দুইটা ভদ্র কৌতুক

০১
বাইরে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে। অনেকক্ষন বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা ঘাটে প্রচুর পানি জমে আছে। এর ভিতর এক মাতাল চিৎকার করে কেদে কেদে বলছে, কে আছো ভাই? একটু ধাক্কা দাও।

লিসা তার জামাই ববকে ডেকে তুলল। আমার মনে হয় তোমার যাওয়া উচিত।
-কিন্তু বাইরে অনেক বৃষ্টি। রাস্তায় অনেক কাদা।
-তোমার গত বছরের কাহিনী মনে নাই?
-আছে মনে আছে। কিন্তু এই ব্যাটার গলা শুনে ত মনে হচ্ছে পুরা মাতাল।
-তোমার গলা শুনে সেদিন কি অন্যরা মাতাল ভাবে নি?

গত বছর লিসার বাচ্চা হবে। রাতের বেলা হাসপাতালে নিয়ে যাবে। সেদিনও এমন বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট ভেসে যাচ্ছিল। তাদের গাড়িটা আটকা পড়ে গিয়েছিল কাদায়। অনেকক্ষন ঠেলে ঢুলেও বব গাড়িটা গর্ত থেকে বের করতে পারছিল না। এদিকে বউয়ের বাচ্চা প্রসবের সময় হয়ে যাচ্ছে। বার বার বব ধাক্কা মারছিল। কিন্তু গাড়িটা বের করে আনতে পারছিল না। একসময় হতাশায় সে চিৎকার করে কাদা শুরু করেছিল । ধাক্কা দাও। কেউ একজন এসে ধাক্কা দাও। আশেপাশের বাসা থেকে দুইজন সহৃদয় মানুষ বের হয়ে এসেছিল। নিজের ভিজে, কাদায় মাখামাখি হয়ে গাড়িটা বের করে দিয়েছিল ধাক্কা মেরে। আর সেদিন রাতেই তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছিল।

আজকে, বছরখানেক পর, আরেক বৃষ্টির দিনে এক মাতাল চিৎকার করে বলছে, ধাক্কা দাও। আমাকে ধাক্কা দাও।

বব বের হয়ে আসল। রাস্তার পাশের লাইটগুলাও নিভে আছে কেন জানি। বেশ অন্ধকার। কিছুই দেখা যাচ্ছে না। শুধু চিৎকার শোনা যাচ্ছে, ধাক্কা দাও।
বব বলল, ভাই আপনি কই?
-এদিকে আসেন।
বব সামনে এগিয়ে যায়।
-বাগানের ভিতর আসেন।
বব বাগানে ঢুকে পড়ে। ভাই, আপনাকে দেখছি না ত।
-ভাই, টবগুলার পাশে আসেন।
বব টবের পাশে এসে দাঁড়ায়।
-ভাই ,আপনার মত মানুষ হয় না। আসেন, একটু ধাক্কা দেন ত। অনেকক্ষন দোলনায় বসে আছি। এত ডাকছি। কেউ ধাক্কা দিতে আসে না।


০২

বিচারক আসামীকে ২০ বছরের সাজা দিয়েছেন।
আসামী- হুজুর, আমি একটা জিনিস জানতে চাচ্ছিলাম।
বিচারক- বল। কি প্রশ্ন?
-যদি আমি আপনাকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দেই , তা হলে কি হবে?
-আদালত অবমাননার অভিযোগে, তোমার সাজা আমি আরো ২ বছর বাড়িয়ে দিব।
-যদি আমি মনে মনে চিন্তা করি, মনে মনে গালি দেই?
-তাহলে সমস্যা নাই।
-তাইলে আমি মনে মনে ভাবছি, আপনি একটা মোটা মাদী শুয়োরের ভোটকা একটা বাচ্চা।

বড় দুঃখ পেলাম :| /:) :(( ( একটি পরিশিষ্টযুক্ত দুঃখবিলাসী আজাইরা পোষ্ট)

বাসে উঠে পাশের সিটে সুন্দরী তরুনী পাবার সৌভাগ্য আর কয়জনের হয়। গতকাল এমন একটা সুযোগ এসেছিল। যাচ্ছি সাবেক ১৪ নম্বর বাসে করে ইউনিভার্সিটিতে। যাত্রাবাড়ি থেকে এক চাদর পড়া ললনা বাসে উঠল। আমার কপালের গুনেই হোক বা অন্য কারনেই হোক, এসে বসেছে ঠিক আমার পাশেই। চোখে চশমা, গায়ে চাদর –ইউনিভার্সিটির ছাত্রী না হয়েই যায় না। ললনার গা থেকে পারফিউমের সুবাতাস। গন্ধটায় কিছুটা বিস্কুট বিস্কুট ভাব আছে।

কিন্তু আসল কথা হলো, মিনিট দুয়েক আমার পাশে বসেই ললনা অন্য সীটে চলে গেল। দুঃখ - দুঃখ - দুঃখ -পেলাম...আমিইইইইই...দুঃখ -দুঃখ -দুঃখ -পেলাম...

না হয় আমি গত চারদিন গোসল করি নাই। শীতের সময় চারদিন অনেকেই গোসল না করে থাকে। না হয়, এর আগের রাতে গেম পার্টিতে জয়েন করে মাত্র ৩ ঘন্টা ঘুমিয়েছি, চোখ লাল ছিল। তা আজকাল কার না চোখ লাল থাকে। না হয় চুল এলোমেলো ছিল। তা ছেলদের চুল কি পরিপাটি করে আচড়ানো থাকে? না হয়, টি শার্ট যেটা পড়েছিলাম সেটা গত এক সপ্তাহ যাবত ধোয়া হয় নি। তা বাসায় বুয়া না আসলে অনেকেরই ত কাপড় ধোয়া হয় না। তাই বলে কি বুকে এমন আশা জাগিয়ে পরে এতবড় দাগা মেরে অন্য সীটে চলে যেতে হয়? এই যে আমি ললনা পাশে এসে বসতেই, মনে মনে কত কথা ভেবে ফেললাম। কোন কথাটা প্রথম বলব। কিভাবে আলাপ শুরু করব একেবারে কবিতার মত করে। কি বলব আর কি বলব না। কেমন করে কোন কৌশলে –এমনভাবে নিজের ঢোল পিটাব যাতে ললনার মনে হয় অতি সুমধুর বাজনা বাজছে- এই ভাবনা গুলোর কোন মর্যাদাই সে রাখল না। হৃদয়হীনা নিষ্ঠুর নারী অন্য সীট ফাকা পেয়ে সেখানে চলে গেল। সেই সীটটাও এমন আহামারি কিছু না। সবার শেষের পাচজনের লম্বা সীটগুলার জানালার পাশের সীট। তা আমার জালানার পাশের সীটটা কি আমি ছেড়ে দিতে পারতাম না?

ললনার হৃদয়হীনতায় ব্যাথিত হয়ে আমি বিমর্ষ মুখে ঢাকার ময়লা আকাশ দেখতে লাগলাম।

পরিশিষ্ট

এমন একটা ঘটনার পরিশিষ্ট না থাকলে আসলে জমে না। এই ঘটনারও একটা পরিশিষ্ট আছে।
কিছু মানুষ আছে খোদা-ভগবান মানে না। তাদের ধারনা, দুনিয়াতে আর ভালো মানুষী নাই। দুনিয়াতে খারাপ কাজের শাস্তি নাই। একজন সৃষ্টিকর্তা যদি আসলেই থাকত, তাহলে মানুষের বুকে দাগা মেরে কেউ শান্তি পেত না। তাদের জ্ঞাতার্থে বিনয়ের সাথেই এই পরিশিষ্ট যুক্ত করা হলো।
সায়েদাবাদ হতেই তিন-চারজন বাসে উঠল। গ্রাম থেকে আসা মানুষ। সাথে ইয়া বড় ছালার বস্তা। আমার টি-শার্ট যদি এক সপ্তাহ না ধোয়া হয়ে থাকে, তবে তাদের জামা কাপড় গার্মেন্টস থেকে বের হয় আর সাবানের মুখ দেখে নাই। গা থেকে ভুরভুর করে একেবারেই স্বদেশী নিজ দেহে প্রস্তুত গন্ধ বের হচ্ছে। ( ভালো করে লক্ষ্য করুন শুধু গন্ধ বের হচ্ছে লিখলাম।“ সু” বা “দু” যুক্ত করে গন্ধটার বিশেষন দিলাম না। আমার কাছে ঘামে ভেজা মানুষের গন্ধ খারাপ লাগে না। ) তাদের একজন একটু ইতস্তত করে ললনার পাশে বসে পড়ল এবং বাকি পথ অতি উচ্চস্বরে মোবাইলে ঢাকায় নিরাপদে পৌছেছে এই খবর জানাতে লাগল। তার কথোপকথন থেকে তার সম্পর্কে আমাদের অনেক জ্ঞান লাভ হলো। অতি উচ্চস্বরে আলাপের কারনে আরো বুঝতে পারলাম ফোনের অই প্রান্তে যে আছে তার বুদ্ধিমত্তা বা লিংগ যাই হোক না কেন-কানে সে কমই শুনে। ললনা দেখলাম বিমর্ষ মুখে জালানা দিয়ে ঢাকার ময়লা আকাশ দেখা শুরু করছে।

যে দুঃখটা কিছুক্ষন আগে নিতান্ত আমার ছিল সেটা রূপ পাল্টে ললনার কাছে চলে গেছে।