বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধু " মোটা"

আমাদের ক্লাসে দুইজন নাসিম উপস্থিত। একজন একটু সরু আরেকজন স্থুলদেহী। আমরা একজন ডাকতে শুরু করলাম চিকনা আরেকজনকে মোটা। চিকনা আর মোটা দুইজনকে নিয়েই আমি ব্লগ লিখব। আজকে মোটার পালা।

আদি কান্ড
মোটার সাথে আমার পরিচয় পর্ব দিয়ে শুরু করি। স্যার ক্লাসে রোল কল করছেন। ত্রিশ ডাকলেন যখন তখন মেয়েদের পিছনের সীটে বসা এক ছেলের বিকট চিৎকার= yes sir. সেবার প্রথম মোটা আমার নজরে পড়ল। তখনও বন্ধুত্বের সূচনা হয় নি। সত্যিকারের সূচনা এর কিছুদিন পর। ক্লাসের ফাকে ফাকে যে বিরতি পাওয়া যেত সে সময় আমি হলের কমনরুমে গিয়ে নানা ম্যাগাজিন পড়তাম। একবার একটা ম্যাগাজিন পড়ছি।
একটা রগরগে উপন্যাস। নায়িকা পাটের ক্ষেতে ঢুকেছে। হঠাৎ পাট ক্ষেতে নড়াচড়ার শব্দ। এমন উত্তেজনার সময় আমি টের পেলাম আরেকজন কেউ পিছে দাঁড়িয়ে আমার ঘাড়ের ওপর দিয়ে আমার সাথে সাথে পড়ছে। এদিকে পাটক্ষেতের ভিতর যা শুরু হবার তা শুরু হয়ে গেছে। মাশাল্লাহ বর্ননায় কোন ঘাটতি নাই। আমি খুব অস্বস্তি নিয়ে পড়তে লাগলাম। কয়েকবার শরীর ঝাকিয়ে অস্বস্তি প্রকাশও করলাম। কিন্তু ছেলেটা আমার ঘাড়ের ওপর দিয়ে আমার সাথে পড়তেই লাগল। আমি পড়া শেষে তাকে প্রশ্ন করলাম,
- তোমার নাম কি?
-নাসিম ।
সেই দিন মোটার সাথে আমার বন্ধুত্বের সুচনা।

মোটা রাইফেলস পাবলিকের আর আমি নটের-ডেমের। আমাদের দুইজনেরই পরিবার এবং পাড়ায় অতি ভদ্র ছেলে হিসাবে সুনাম ছিল। আমরা দুইজনেই লাজুক ছিলাম আর ছিলাম অন্তরমুখী। কিন্তু যে দিন আমরা দুইজন একত্র হলাম সেইদিন মহাবিশ্বের কোথাও বিস্ফোরন হল।(চাচা-চৌধুরীর সাবু রেগে গেলে কোথাও আগ্নেয়গিরি আগ্ন্যুৎপাত শুরু হয়। তেমনই বড় ঘটনা আমার আর মোটার একসাথে হওয়া।) সেখান থেকেই যত বিপত্তি। আমাদের ভালো-মানুষী সব কোথায় যে ঊড়ে গেল। আমরা একজন আরেকজনের সাপোর্টার হলাম। একজন কিছু একটা ভালো বা খারাপ যাই করুক না কেনো অন্যজন পিঠ চাপড়ে বাহবা দিতাম। আমাদের কর্মকান্ডগুলোর কয়েকটা পাঠকের জন্য তুলে ধরছি।

১.

লেভেল ৩ এর দিকে আমরা শুনলাম একটা স্কলারশীপ এসেছে মার্কিন মুল্লুক হতে। সিভিলের একজনকে দেয়া হবে সুযোগ। আমাদের ক্লাসের পিচ্চি( আমাদের সহপাঠিনী, সাইজে একটু ছোট বলে এই নামকরণ) সেই সুযোগ পাবে। আমি আর মোটা প্রথম খোজ লাগালাম পিচ্চির কাছে সুহাদ নামের আমাদের ক্লাস-মেটের ফোন নাম্বার আছে কিনা। জানলাম যে নাই। এরপর আমাদের মোবাইল থেকে সুহাদ নাম দিয়ে এসএমএস পাঠাতে শুরু করলাম।

" তুমি বিদেশে যেও না। তুমি চলে গেলে আমি সিভিল ভবনের সাত-তালা থেকে লাফ দিব। -তোমার সুহাদ"।

পিচ্চি ত এইসব সিরিয়াসলি নিছে। পিচ্চি সারাজীবনে কোন কিছু হালকা ভাবে নেয় নি। সুহাদের ত ব্যাখ্যা দিতে দিতে মাথা খারাপ। একই কাজ আমরা আমাদের আরেকজন ক্লাসমেটের সাথেও করেছি। তার নাম পার্বতী (পর্বতের মত আকার বলে) । পার্বতী কে আমরা সুহাদ সেজে প্রচুর এসএমএস করেছি। সুহাদ জানত না। একদিন সুহাদ আমাদের বলে মোটা ক্লাসে পার্বতী আমার দিকে তাকিয়ে হাসে কেনো বলত?


২.

আমাদের আরেকটা কাজ ছিল ক্লাসের মেয়েদের ব্রা নিয়ে গবেষনা করা। গরমের সময়টা এর জন্য খুব ভাল ছিল। এমন কোন গরমের দিন নাই যেদিন আমরা দুইজন মেয়েদের পিছনের সীটে বসি নাই। এক্ষেত্রে একটা কথা আগে বলে নেয়া ভাল। ইংরাজীতে invention আর discover বলতে দুইটা আলাদা শব্দ আছে। আমি আর মোটা ব্রা বিষয়ক কিছু ডিসকভার করেছি আর কিছু ছিল আমাদের ইনভেনশন। উদাহরন্স্বরুপ-ডিসকভার করেছি যে আমাদের ফার্স্ট গার্ল মাঝে মাঝে তার সাইজের চেয়ে ছোট ব্রা পড়ে, সেগুলো তার ছোটবোনের। ইনভেনশন করেছি যে বিড়ালী( তার অতি হালকা গোফ ছিল) গোলাপী রঙের ব্রা পড়তে পছন্দ করে। সেইগুলোতে থাকে ফুলের কাজ করা। বলা-বাহুল্য বিড়ালীর বয়-ফ্রেন্ড আমাদের আবিষ্কারের কাহিনী শুনে মহা-খাপ্পা। সে আমাদের সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছিল। অবশ্য বিড়ালী গোলাপী ব্রা পড়া বন্ধ করে নাই।


৩.
প্রতিবছর আমরা ক্লাসে নানা বিষয়ে জরিপ চালাতাম। একবার কোন ধরনের পর্নো পছন্দ সে বিষয়ে জরিপ চালালাম। মেয়েরা ভোটের কাগজটা দেখেই ছুড়ে ফেলে দিল। নানী(দেখতে খুব বয়স্ক দেখাত তাই এই নাম) সবচে বেশী রাগ করেছিল। অথচ আমরা দুইজনেই জানতাম তার কাছে সবার চেয়ে বেশী পর্নো মুভি আছে। আমাদের ক্লাসের আরেকজন মেয়ে সেটা ফাস করে দিয়েছিল আমার কাছে। আমরা দুইজন প্রতিবছর সবচেয়ে ফাজিল ছেলে হিসাবে প্রথম আর দ্বিতীয় হতাম। অথচ আমরা দুইজন কলেজ লাইফ পর্যন্ত অতি ভদ্র ছেলে ছিলাম। বুয়েটে এসে এমন হলাম কেন আমরা নিজেরাও বুঝতাম না। পরে ভেবে দেখেছি যে আমরা দুইজনই হয়ত মেয়েদের সঙ্গ কামনা করতাম। কিন্তু দুইজনেই দেখতে ছিলাম খারাপ আর রেজাল্টও আহামারি কিছু ছিল না। মেয়েরা তেমন একটা পাত্তা দিত না। হয়ত এই পাত্তা না পাওয়ার কষ্ট পরে অতিরিক্ত ফাজলামী হিসাবে প্রকাশ পেয়েছে।


৪.
PL আমাদের জন্য কোনদিন প্রিপারেটরী লিভ ছিল না। সেটা ছিল "পাছায় লাত্থি"। আমরা দুইজন অবশ্য প্রতিবারই প্রতিজ্ঞা করতাম অনেক হইছে আর না। এইবার পড়মু। কিন্তু লাইব্রেরীতে গিয়ে শুধু মেয়েদের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। জুটি গুলোর দিকে কড়া নজর রাখতাম কখন এরা একজন আরেকজনকে চুমু দেয়। আমরা জুনিয়র মেয়েদের দিকে খুব মায়াময় চোখে তাকাতাম আর গোপনে মোবাইলে ক্যামেরায় ছবি তুলে নিয়ে আসতাম। আমাদের কাছে এমনি করে করে বিশাল কালেকশন হয়েছিল। এটা অবশ্য গর্ব করার মত কিছু না। এরসাথে সাথে আমাদের ক্লাসের প্রতিটা মেয়ের পাছার ছবি আমাদের কাছে ছিল। সহপাঠিনীদের পাছার ছবি আমার গার্লফ্রেন্ড দেখেও ফেলেছিল। সেটা আরেক কাহিনী।


উত্তরকান্ড

পাশ করার পর দুইজন ছিটকে গেলাম দুইদিকে। সে চাকুরী শুরু করল থিসিস জমা দিয়ে। আমি এর কিছুদিন পর। শেষবার আমরা কর্মকান্ড চালালাম আমার চাকুরীতে জয়েন করার আগের দিন। ধানমন্ডি লেকের চারপাশে চক্কর কেটে জুটিগুলোকে চরম বিরক্ত করেছিলাম সেইদিন। কোন একটা জুটিকে একটু ঘনিষ্ঠ অবস্থায় পেলেই তাদের পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা অপেক্ষা করত কখন আমরা চলে যাব। ভর-দুপুরে এমন ঠা ঠা রৌদ্রেও আমরা দুইজন দাঁড়িয়ে ছিলাম তাদের বিরক্ত করার জন্য। মাঝে মাঝে জুটি উঠে চলে যেত। এখন আমরা দুইজন আর একসাথে হই না। আলাদা হবার সময় ভেবেছিলাম সপ্তাহে একদিন হলেও মিলিত হব। মাসের পর মাস যায় মিলিত আর হই না।




পাঠিকারা (আমার ব্লগের পাঠিকা এমনিতেই কম, আজকের পর আর কেউ আসবে কি না জানি না) যদি বিরক্ত হন তবে কিন্তু আমি মন খারাপ করব না। যে কাজ করে এসেছি বুয়েট লাইফে তার তুলনায় আপনার রাগ আমাদের কাছে কিছুই না। তবে আপনি এতক্ষন ধৈর্য ধরে পড়েছেন তাই আপনাকে ধন্যবাদ।

(আমি অবশ্য কিছুটা ভয়ে ভয়ে আছি। প্রগতিশীল সম্প্রদায়ের মাথা ব্যথা আবার শুরু হয়ে যায় কিনা। এরা আপনার মানসিকতার পরিবর্তন করুন টাইপ মন্তব্য করতে খুব পছন্দ করে। কিছুদিন আগে একজন তিনশ মাইনাসের সীমা অতিক্রম করেছে। তবে আমার আশা নিশ্চয় তিনশ হওয়ার মত পোস্ট এটা না)

No comments: