ব্যথার পূজা হয়নি সমাপন.

সকালে বাসে আসছি। ইদানীং রাস্তা বেশ ফাকা থাকে। মনটা বেশ ফুরফুরে থাকে। রাস্তা ফাকা থাকায় জ্যাম নাই। চল্লিশ মিনিটেই যাত্রাবাড়ি থেকে মহাখালী অফিসে চলে আসতে পারি। বাসে সীটও পাই। ফলে মনটা খুব শরীফ থাকে। তবে আজকে সেটা আর থাকল না। জয়কালী মন্দিরের মোড়ে এসে একটা দৃশ্য দেখে মনটা খুব খারাপ হল। একজন তের-চৌদ্দ বছরের কিশোরী রাস্তার পাশে বসে আসে। তার হাতে সিরিঞ্জ। সে ড্রাগ নিচ্ছে। তার পাশে দুইটা বোতলও আছে। সেখানে কি তরল আছে সেটা খোদাই জানে। তবে সেটা পানি না বলেই মনে হচ্ছিল।

মেয়েটাকে দেখে খুবই মন খারাপ হল। প্রানের কি বিপুল অপচয়। এই বয়সে তার জীবন এমন হওয়ার কথা না। এই বয়সে তার শরীরে পরিবর্তন আসা শুরু করবে। সে ছেলেদের ব্যাপারে একটু একটু আগ্রহ বোধ করা শুরু করবে। তা না হয়ে, সে ড্রাগ নিচ্ছে। কি কাজ করে তার জীবিকা অর্জন হয়? কোথা থেকে সে ড্রাগের পয়সা পায়? আমার ত মনে হয়েছে সে হয় পতিতা বা সে পতিতা হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। পতিতা হিসাবে এই বয়সে তার চাহিদা (!) কতটুকু সেটা আমি জানি না। যে কয়টা টাকা সে দিনে অর্জন করে তার বড় অংশ ড্রাগের পিছে নষ্ট হচ্ছে। যদি তার মাথায় বুদ্ধি থাকে একটু, তবে হয়ত ড্রাগের ব্যবসাই শুরু করবে । ব্যবসায় উন্নতি করে সে একটু ভালো করে বাচতে পারবে। ( এই ব্যাপারেও আমার সন্দেহ আছে) । আর বুদ্ধি না থাকলে তার জীবন কাটবে পতিতা বৃত্তি করে।

যখন তাকে দেখি তখন আমার কানে হেডফোন। আমি রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনছি। কাকতালীয় ভাবে তখন কানে বাজছে -আমার সকল দুঃখের প্রদীপ জ্বেলে দিবস করব নিবেদন। এই গানটা আমার ছিল এতদিন। এখন জানলাম আমার চেয়ে অন্যদের অধিকার এই গানে বেশী। ... ব্যথার পূজা হয়নি সমাপন...

এক একটা প্রান পৃথিবীতে এসে এইভাবে তার সময় শেষ করে। এই বিশাল পৃথিবীর এত সৌন্দর্যের কিছুই যে সে দেখতে পাবে না। শুধু গ্লানি টেনে টেনে তার জীবন পার হবে। তার জীবনের ব্যর্থতার দায় কে নিবে?

No comments: