মূল তথ্য- বাংলাদেশ আর্মি বছরে পাচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে।

চলেন, আগে জানি বঙ্গবন্ধু বা যমুনা সেতু সম্পর্কে। টাইপ করতে সুবিধা হবে বলে আমি যমুনা সেতু এই নামটাই ব্লগের বাকি অংশে ব্যবহার করব।

যমুনা সেতু আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সিভিল স্ট্রাকচার। একজন সিভিল ইঞ্জিনীয়ার হিসাবে এই ব্রীজের প্রতি আমি সব সময় এক ধরনের ভালোবাসা বোধ করে এসেছি। বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য এই আকারের (অর্থের দিক দিয়ে) কিছু তৈরী করতে বেশ সাহস আর দীর্ঘ পরিকল্পনার প্রয়োজন।
যমুনা সেতু বানাতে এর খরচ জোগাড় করতে সরকারের কালো ঘাম ছুটে গেছে। এডিবি সহ অন্যকিছু খাত থেকে টাকা এসেছে। সরকার নিজেও কিছু বহন করেছে। দেশের বহু নেতা এই সেতুর স্বপ্নই শুধু দেখে গেছেন, কাজটা শুরু করতে পারেন নাই। মাওলানা ভাসানী বোধহয় প্রথম এই সেতু তৈরীর দাবি জানান। সেটা পাকিস্তান আমলে। এরপর অনেক সরকার অনেক ধরনের স্টাডি করেছেন, কিন্তু সাহস আর পরিকল্পনা করতে পারেন নাই। উত্তরের লোকজন গ্যাস বিল আর পানির বিল ইত্যাদির সাথে আলাদা করে কর দিয়েছে যেন একটা সেতু হতে পারে। ঈদের ছুটিতে যেন তার আপনজন সহজে বাড়ি আসতে পারে।
যমুনা সেতু শেষ পর্যন্ত আমরা বানাতে পেরেছি। এরজন্য দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করতে হলো।

বাংলাদেশের জন্য এই সেতুর কতটুকু গুরুত্ব তা মনে হয় বলার অপেক্ষা রাখেনা। এই সেতু হবার পর আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। পরিবহনের খরচ কমেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কোন দেশের সাথে যদি আমাদের যুদ্ধ হয়, তবে তাদের প্রথম লক্ষ্য থাকবে এই সেতু উড়িয়ে দেয়া। সেতুটার কৌশলগত আর অর্থনৈতিক গুরুত্ব এতেই অনুমান করা যায়। আপনি জানেন কি- যমুনা সেতুতে সার্ভিলেন্স ক্যামেরা লাগানো আছে। যেকোন গাড়ি সেতুতে উঠলেই তার রেকর্ড রাখা হয়। আপনি যমুনা সেতুতে উঠে গাড়ি থামাতে পারবেন না। সেতুর নিরাপত্তা রক্ষার্থে এই ব্যবস্থা। অফিসিয়াল গাড়ি এই মাথা থেকে সেই মাথা গিয়ে প্রতি দুই ঘন্টায় একবার চেক করে। একটা গরীব দেশ যতটুকু ভালোভাবে সম্ভব ততটুকু চেষ্টা নিচ্ছে যমুনা সেতু রক্ষার পিছনে। ধারনা করা হয় আমাদের জিডিপির ১% শুধুমাত্র চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসে। আমার ত মনে হয় যমুনা সেতুর জন্যও ১% হয়। (আমি কোন পরিসংখ্যান খুজে পেলাম না। )
আমি জানি না আপনি কতটুকু বুঝতে পারছেন এই সেতুর গুরুত্ব। ধরে নিচ্ছি , পরিস্কার জানেন।
পদ্মা সেতু নামে আরেকটা সেতু বানানোর প্লান চলছে। এই সেতুরও অনেক গুরুত্ব। কিন্তু সরকারের হাতে টাকা নাই। পুরোটা নিজের টাকায় বানানো সম্ভব না। কয়দিন আগে পেপারে দেখেছি এডিবির কাছে আরো কিছু টাকা চাওয়া হচ্ছে। একটা যমুনা সেতু বানাতে আমাদের ত্রিশ বছরের বেশি লেগেছে- পদ্মা সেতু বানাতে কতদিন লাগবে কে জানে।
এইবার আসল কথায় আসি। বাংলাদেশ আর্মি বছরে পাচ হাজার কোটি টাকা খরচ করে। এই টাকার পরিমান আসলে কত সেই আইডিয়া আপনার আছে? নিচের হিসাবগুলো পড়ুন।
বাংলাদেশের আর্মি যদি বছরে মাত্র ২০% টাকা কম খরচ করত, তবে প্রতি চার বছরে আমরা একটা করে যমুনা সেতু বানাতে পারতাম। প্রতিটা রাজনৈতিক দল ক্ষমতা থাকার সময় একটা করে গুরুত্বপূর্ন সেতু বানিয়ে দিয়ে যেতে পারত। জিয়া সেতু, হাসিনা সেতু, খালেদা সেতু- সব সেতুই আমরা পেতাম।
আসেন এইবার একটা সুখ কল্পনা করি, দেশে আর্মি নাই। সীমান্ত রক্ষা আর পুলিশের কাজ এই দুইটা করা হচ্ছে একটা সম্মিলিত বাহিনী দিয়ে। আমরা বাকিটাকা যদি দেশের উন্নয়নে খরচ করতে পারতাম তবে প্রতি বছর একটা করে পদ্মা সেতু বানাতে পারতাম। দেশের এক কোটি লোক দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। যদি সেতু না বানিয়ে টাকাটা সরাসরি তাদের ভর্তুকি হিসাবে দিয়ে দিতাম, তবে চল্লিশ লক্ষ লোক শুধুমাত্র সরকারের ভর্তুকির কারনে সরাসরি দারিদ্র্যসীমা থেকে বের হয়ে আসতে পারত। আর যদি এই টাকা মানব সম্পদ উন্নয়নে লাগাতাম, তবে কত লক্ষ লোক আর দরিদ্র থাকত না সেটা গবেষনার বিষয়।
এখন নিজেকেই প্রশ্ন করেন, বাংলাদেশ যে উন্নতির জোয়ারে আসলে ভাসছে না, তার পিছে কি কি কারন আছে ? কে এবং কি আমাদের পিছনের দিকে টানছে?
========================
আপডেট

কমেন্ট পড়ে মনে হল অনেকে ব্লগের মূল কথাটা ধরতে পারেন নাই। আমি শুধু আমাদের উন্নতির অন্তরায় এর অনেকগুলা কারনের একটা বড় কারন আর্মি, সেইটাই বলতে চেয়েছি। এককভাবে আর্মি আমাদের পিছে ধরে রাখে নাই।

=========================
আপডেট ২
েপচাইললা বলেছেন: কোন বিতর্কে না গিয়েই বলা যায় আমরা যে আর্মি পুষছি তার দরকার আছে কি-না। প্রায় এক লাখ ত্রিশ হাজারের মত ফোর্স, যাদের কাজ শুধু সারাদিন ভাল ভাল খাওয়া-দাওয়া করা, সকাল-সন্ধা ব্যায়াম করে শরীরের শক্তি বাড়ানো এবং সেই শক্তি .......থাক। আবার মিয়ানমারের মত ছাগল এসে ঘাড়ের কাছে তড়পাবে, আমাদের সীমানা-সম্পদে হাত দেবে আমরা শুধু আঙুল চুষব আর প্যারেড করব, শক্তিবৃদ্ধি করব।

ও আচ্ছা, তারা আবার বিদেশে গিয়ে বিশ্বের শান্তি-শৃঙ্খলা দেখাশোনা করে, অনেক টাকা কামায় যদিও সে টাকা তাদের ব্যাক্তিগত আয় মাত্র। আমাদের খায় তাতে কি, রাজনীতিবিদদের মত নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন তো ঘটাচ্ছে!! যদিও পন্ডিতেরা মনে করেন এতে আমাদের দেশে ব্যপক পরিমানে টাকা আসছে- রেমিটেন্স যাকে বলে। রাষ্ট্রের খেয়ে-দেয়ে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় বাইরে গিয়ে কামানো টাকায় রাষ্ট্রীয় কিংবা সার্বজনীন আয় কোথায় হয় তা আমি আর শরৎচন্দ্রীয় স্টাইলে জিজ্ঞাসা করব না । কারণ প্রশ্ন রাখলেই সেই পন্ডিতেরা উত্তর দেবেন যে কেন দেশে টাকা আসা মানেই তো কোন না কোন ভাবে অর্থনীতি শক্তিশালী হওয়া। আমিও সেই একই স্টাইলে উত্তর দেবার দরকার মনে করব না যে আর্মির কামানো টাকা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাড়ী-গাড়ি করে, বউদের বিউটি পার্লারে পাঠানোর কাজেই ব্যয় করা হয়। বাকী টাকা ব্যংকে রেখে সারাজীবন আয়েশ করার কাজেই ব্যয় হয়। উৎপাদনশীল কোন খাতে ব্যয় করা হয় না যাতে এর মাধ্যমে অন্যদেরও অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। এখানে আবারো প্রশ্ন উঠতে পারে যে সাধারণ জনগণ যখন বাইরে গিয়ে একই কাজ করে তখন তো আমরা প্রশ্ন তুলি না। উত্তর দেবার দরকার নেই যে তারা সম্পূর্ণ নিজেদের খরচে যায় এবং এখানে রাষ্ট্র বরং তাদের শোষণই করে। কিভাবে, তা পাঠক নিশ্চয়ই বিচার করতে পারবেন।

আর্মি বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তায় কতখানি গুরুত্ব রাখছে, সে প্রসঙ্গে আসা যাক। আমাদের যুদ্ধ করার আছে কার বিরুদ্ধে? ভারত? বার্মা? অন্য কেউ? কেন করবে? আমাদের সম্পদ বলতে কি আছে? প্রাকৃতিক সম্পদ? এর থেকেও বেশি সম্পদ অর্থাৎ নগদ টাকা আছে সিঙ্গাপুরের, সুইজারল্যান্ডের। তাদের তো কেউ হামলা করছে না। তাহলে? ভারতের কাছেই সবচেয়ে হুমকিটা রয়েছে, মকিন্তু ভারত যদি আক্রমণ করেও আমরা কত ঘন্টা টিকব? হিসেবটি পাঠকের জন্য তোলা থাক।

আর আচরণগত দিক? থাক না সেকথা, আমরা সে কথা বলার অধিকার রাখি না। আমরা তো ব্লাডি সিভিলিয়ান।

No comments: