অর্ধেক ডিম খেতে বাধ্য হওয়া- জঘন্যতম ইতরামির বিবরন

আমার বিশ্বাস কাউকে অর্ধেক ডিম খেতে বাধ্য করা জঘন্যতম ইতরামি। কোয়ান্টাম থিওরী অনুযায়ী আলো যেমন কোয়ান্টিত বা প্যাকেট আকারে বের হয় তেমনি মুরগি সবসময় একটা করে ডিম পারে। কখনো শুনা যায় না মুরগি ১.২৫ বা অর্ধেকটা ডিম পেড়েছে। সুতরাং কোয়ান্টাম থিওরী অনুযায়ী মানুষেরও প্রতিবার একটা করে ডিম খাওয়া উচিত।
আফসুসের বিষয় কোয়ান্টাম থিওরীর বিপরীতে যেমন আলোর তরংগতত্ব আছে তেমনি একবারে একটা আস্ত ডিম খাওয়ার বিরুদ্ধেও লোক আছে।
আমি ইদানীং দিনে অর্ধেকটা ডিম খাই।
ঢাকার বাইরে পোস্টিং। সেখানে থাকি একা। এইসব ক্ষেত্রে যা হয় আর কি, আমরা দুইজন সমগোত্রীয়( বি,এস,সি ইঞ্জিনীয়ার) একত্রে একটা মেসের মত করে খাই। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়াররা খায় আলাদা।
আমরা যে দুইজন থাকি তার একজন যে আমি সেটা ত বলার অপেক্ষা রাখে না। আরেকজনের নাম দেয়া যাক ঞ। ঞ যা করছে তা হল প্রতিদিন সকালে বাসার বুয়াকে একটা ডিম দেয় ভাজি করার জন্য। নাস্তার সময় সেই ডিমটা সে চামচ দিয়ে টানা-হেচড়া করে অর্ধেক করে। একটা ভাগ নিজে নিয়ে বাকিটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে, নেন আখসানুল। ডিম খান। আমি অর্ধেকটা ডিম টেনে লই। বাসায় আমি সবসময় দুইটা ডিম খাই। এখন অন্তত একটা ত জুটবে, নাকি? প্রতিবার আমার বলতে ইচ্ছে করে আমি পুরা ডিম চাই। কিন্তু ভদ্রতাবশত আমি সেটা বলতে পারছি না।


এক বুধবারে শুনি ঞ বাড়ি যাবে। আমি মহা খুশি।আস্ত দিম খাব। পুরো একটা ডিম। গোলাকার করে ভাজা হবে। থাকবে পেয়াজ। একটা কাচা মরিচ ছোট ছোট করে কাটা। লবন দেয়া থাকবে পরিমান মত। ডিমটা আমি পরোটা দিয়ে খাব না। খাব এমনি এমনি। খাব একেবারে আস্ত।


সেদিন বৃহস্পতিবার। সকালটাই অন্যরকম। আজকে আস্ত ডিম খাব । হি হি হি
গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে দাত মেজেছি। ধোয়া সার্ট পড়েছি। প্যান্ট পড়েছি। এরপর টেবিলে বসেছি খেতে। ডিম নাই টেবিলে।
বুয়াকে জিজ্ঞেস করলাম ডিম কই?
ঞ স্যার ডিম নিজের রুমে তালা মেরে রেখে চলে গেছেন।

আমি হতাশ। আমি পরাজিত। যে লোক ডিম অর্ধেক করে খায় সে যে ডিম নিজের রুমে লুকিয়ে রাখবে সেটা আর আশ্চর্য কি!
আমি বুয়াকে বললাম ঠিক আছে। উনার ত আসতে দেরী আছে। এই নিন টাকা। একহালি ডিম কিনে নিয়ে আসবেন।


ভাবি না হয় বৃহস্পতিবার ডিম না খেয়ে থাকলাম, শুক্রবার খাব।

শুক্রবার সকালে ডিম খেতে গিয়ে দেখি ডিম অর্ধেক। ব্যাপার কি? আমাকে কি কেউ আস্ত ডিম খেতে দিবে না? বুয়াকে ডাকলাম।
স্যার ডিম ত পুরোটাই।
এত ছোট কেন?
দেশি মুরগির ডিম স্যার। এরচে বড় হয় না ত।
আমি আর কি করি। ভাবলাম একবার জিজ্ঞেস করি সারা বাংলাদেশ ফার্মের ডিম খায়, আর আপনি খুজে বের করে এনেছেন দেশি মুরগির ডিম?
থাক। আমার কপালে ডিম নাই। এখানকার মানূষজন খারাপ। আমি বাসায় যাব আগামী সপ্তাহে। সেখানে আস্ত ডিম খাব।
পরের সপ্তাহে বাসায় এসেছি। সকালে ঘুম থেকে উঠে গেছে নাস্তা করতে। ডিম ভাজির সুঘ্রান আমি পেয়ে গেছি। তাড়াতাড়ি বসলাম। ডিম ভর্তি প্লেটটা টেনে নিতেই মা বলল, “ আজকে না পরীক্ষা!”
ড্যাম! পরীক্ষার দিন আমি কুসংস্কারবশত ডিম খাই না। ডিম আর খাওয়া হল না।

No comments: