রবীন্দ্রনাথের কাছে আমার ঋন

আমার সহপাঠিনীর নাম নানী (এই নামকরন আমি করি নাই। ক্লাসের সব ছেলে তাকে এই নামে ডাকে।) নানী আমাকে শুয়োরের বাচ্চা বলে গালি দিয়েছে। তার ধারনা আমি তাকে সেক্স এর অফার দিয়েছি। আর আমার ধারনা আমি তার সাথে কৌতুক করেছি।
খুলেই বলি। অরকুটে নিজের সম্পর্কে নানী লিখেছে সে একটা তরমুজ।(খুব একটা মিথ্যে লিখেনি। আসলেই বেশ মোটা-সোটা সে) । আমি তার প্রোফাইল পড়ে বেশ হাসলাম। তার স্ক্র্যাপবুকে লিখে আসলাম "তরমুজ খেতে ইচ্ছে করে।" শুধু মজা করার জন্যই লিখেছি। অতকিছু ভেবে দেখিনি। সে উত্তর দিল "দাতের সংখ্যা বাড়াও।" (এই উত্তর পেয়ে আমি ভাবলাম সেও এটাকে মজা হিসাবেই নিয়েছে) আমি বললাম, "দাত যা আছে তাতেই চলবে। ভালো করে পরিষ্কার করে নিব। তরমুজ লজ্জায় লাল হলেই ভাল।" এই কথাটি আমার কাছে তেমন আপত্তিকর কিছু মনে হয়নি। কিন্তু নানীর ধারনা হয়েছে এই কথাগুলো দিয়ে আমি যৌন-সঙ্গমের প্রস্তাব দিয়েছি।
এর উত্তর সে বলল শুয়োরের বাচ্চা।
আধাধন্টা পর আবার বলল বন্ধু তুমি একজন ডাক্তার দেখাও।

আমার মেজাজ খারাপ। প্রথমত কোন ক্লাস-মেটকে আমি সেক্সের অফার করতে পারি এইরকমের একটা reputation আমার তৈরী হয়েছে। নাহলে সে এটা ভাবত না। দ্বিতীয়ত তার সাথে করা রসিকতাকে সে ভেবেছে তার সাথে আমি "ভাব" জমাতে চাচ্ছি। তৃতীয়ত- আমি যদি সেক্স করতে আগ্রহী হতাম। নানীর মত দেখতে কারো কাছেও পাত্তা পাব না-এইটা উপলব্ধি করে মেজাজ খারাপ।

আমি শুয়োরের বাচ্চা গালি শুনে ঝিম মেরে বসে থাকলাম। ভাবলাম আমি কতটুকু শুয়োরের বাচ্চা সেটা দেখিয়ে দেই। তার ফোন নাম্বার যোগাড় করা হল। অরকুটে অন্তত বিশটার মত প্রোফাইল খুললাম বেনামে। ক্লাসের দোস্তদের তার প্রোফাইলের address দিলাম। সবকিছু প্রস্তুত করা হল। গালিগালাজ গুলো ঝালিয়ে নেয়া হল। আমি যথার্থ শুয়োরের বাচ্চার মতই আয়োজন সম্পন্ন করলাম তাকে বেইজ্জত করার জন্য।

এই আয়োজনের ফাকে ফাকেই আবার একটু খারাপ লাগছিল কি করতে যাচ্ছি সেটা ভেবে। নানী আমাকে যা বলেছে , ঠিক বলছে নাকি বলে নাই তার চেয়ে বড় কথা আমি কাজটা ঠিক করতে যাচ্ছি না। কিন্তু রেগে গেলে এইসব বোধ কাজ করে না। আয়োজনের তোড়জোড় চলছে। সাথে অন্যান্য কাজও করছি স্বাভাবিকভাবে। প্রতিশোধের সেই সময় রবীন্দ্রনাথে ছিন্নপত্র পড়লাম।

উদ্ধৃতি দিতে পারছি না যেহেতু বইটা আমার কাছে এই মুহুর্তে নাই। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন যখন কোন ভাল মানুষের হৃদয় ভাঙ্গে , ভাঙ্গা অংশ দিয়ে বের হয়ে আসে মহৎ কিছু গুন। ফলে যে তাকে কষ্ট দিয়েছে তাকে সে ক্ষমা করে দিতে পারে। তার উদার্য্য বাড়ে, সহনশীলতা ইত্যাদি ইত্যাদি। ফলে প্রতিবার তার হৃদয় ভাঙ্গলে সে আরো উন্নত হয়। আর যখন কোন বর্বরের হৃদয়ভাঙ্গে সেখান দিয়ে বের হয়ে আসে পূঁজ আর নোংরা সব বস্তু। সে নিজে ত কষ্ট পাইই, তার চারপাশের মানুষের সে বিরক্ত করে ফেলে।
পড়ে আমার মনে হল, আমি নিজেও কষ্ট পাচ্ছি আবার সমস্ত দোস্তদের উত্তেজিত করে তাদেরও বাজে একটা কাজে জড়িয়ে ফেলছি। রবীন্দ্রনাথ ত আমার মত মানুষদের ঘৃনা করে এসেছেন সারা জীবন। আমি তখন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি ভাল না হতে পারি, ভাল মানুষ হবার অভিনয় ত করতে পারি। আমি এরপর নানীকে অপমান করার আর কোন চেষ্টা করিনি। অনেকপরে আমি বুঝতে পেরেছি সেইদিনের সিদ্ধান্তটা সঠিক ছিল। নানীকে অপমান করলে আমার লাভের চেয়ে ক্ষতি হত অনেক বেশী। বলাবাহুল্য এরপর রবীন্দ্রনাথের প্রতি আমার ভালবাসা আর শ্রদ্ধা বেড়ে গেছে বহুগুন।

No comments: