ওস্তাদেরও ওস্তাদ , ব্রিটিশের বড় ব্রিটিশ

লোকাল বাসে উঠেছি। বেশ ভিড়। হেডফোন কানে লাগিয়ে গান শুনছি। বাসে অন্যদের সাথে এক দম্পতি যাচ্ছে। পুরুষটার বয়স হবে পয়তাল্লিশের মত। মহিলার বয়স বলতে পারছি না। সে বোরকা পরে ছিল। যাই হোক আমার সামনের একটা সীট খালি হল। পুরুষটা দেখলাম বেশ ওস্তাদ টাইপের। সাথের বউকে বসতে না দিয়ে নিজেই বসেছে। আগে বাসের একটা কমন প্র্যাকটিস ছিল কোন মহিলা উঠলে তাকে জায়গা ছেড়ে দেয়া। এখন সেটা খুব কম দেখা যায়। এর অনেক কারন আছে। এখন বাসে প্রচুর মহিলা উঠে। যদি তাদের দাঁড়িয়ে যেতে না দিয়ে বসতে দেই তাহলে বেশীর ভাগ দিনই নিজের দাঁড়িয়ে যেতে হবে। একদিন বাসে উঠলে এই ভদ্রতা করা যায়। যারা প্রতিদিনের যাত্রী, তারা শুধু ভদ্রতার খাতিরে প্রতিদিন দাঁড়িয়ে যেতে রাজি না কিছুতেই। আমরা আধুনিক হচ্ছি। ছেলে-মেয়ে সবারই সমান অধিকার আছে দাঁড়িয়ে যাবার। তবে ভদ্রতা একেবারে উঠে গেছে সেটা ঠিক না। যদি একজন পুরুষ আর মহিলা দাঁড়িয়ে থাকে, আর একটা সীট খালি হয়, তবে ছেলেটা মেয়েটাকে বসার সুযোগ দিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে যাবে। মেয়েটা এমনভাবে সীটে বসে পড়বে যেন সেটা তার লিংগগত অধিকার। যাই হোক, মূল ঘটনায় চলে আসি। পয়াতাল্লিশের লোকটা নিজের বউকে বসতে না দিয়ে নিজেই বসেছে সীটে। বোরকা পড়া মহিলা সীটের গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে বেশ খারাপ লাগছে। কতবড় ব্রিটিশ হলে, নিজের বউকে দাড় করিয়ে নিয়ে যায়! আমি একবার ভাবলাম উঠে দাঁড়িয়ে মহিলাটিকে বসার সুযোগ দেই। পরে ভাবলাম দরকার নাই। যে ব্রিটিশ নিজের বউকে দাড় করিয়ে রাখতে পারে ভরা বাসে, তার বজ্জাতির সীমা নাই। তার বউকে সীট দিতে গিয়ে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারি। আমার কিন্তু বেশ রাগ হচ্ছিল ব্রিটিশটার প্রতি আর বেশ করুনা হচ্ছিল তার বউয়ের জন্য। কিছুক্ষন পর একসাথে দুইটা সীট খালি হল। জামাই-বউ দুইজন পাশা-পাশি বসে পড়ল। আর আমার মনযোগ তাদের থেকে সরে গিয়েছে। মিনিট দশেক পর দেখি এরা দুইজন উঠে পড়েছে। ভিড় ঠেলে সামনের দরজায় চলে গেল। আর তাদের ছেড়ে যাওয়া সীট সাথে সাথেই বসে পড়ল দুইজন। মিনিটখানেক পর ভিড় ঠেলে আবার ব্রিটিশ ফিরে এল। তার সীটে বসা ত্রিশের একজনকে বলতে লাগল " খুব সীটে বসার লোভ তাই না? বললেই পারতেন! সীট ছেড়ে দিতাম।" তাদের তর্কাতর্কি থেকে যা বুঝতে পারলাম , ব্রিটিশ নামবে মতিঝিল। কিন্তু ঢাকা শহর সে চিনে না ভাল। তাই পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীকে সে জিজ্ঞেস করেছে মতিঝিল কতদূর? পাশের যাত্রী অনেক্ষন দাঁড়িয়ে আছে। তার আর দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে না। সে ব্রিটিশকে বলে দিল মতিঝিল সামনে। এখনই উঠে গেইটে যান। ব্রিটশ ভিড় ঠেলে সামনে গিয়েছে। নামতে গিয়ে জানতে পেরেছে বাস আসলে তখন মগবাজারে। এখন পুরো ভিড় ঠেলে সে ফিরে এসে হাউ-কাউ করছে । আমার সেটা দেখে বেশ হাসি এসে গেল। এই ব্রিটিশেরও ওস্তাদ আছে তাহলে! বাংলাদেশ এমন কিছু মানুষ তৈরী করে যা সারা দুনিয়া খুজে পাওয়া যাবে না। এইদেশে সমস্ত ওস্তাদের ওস্তাদ আছে। যদিও এটা বাংলাদেশ তারপরও এখানে ব্রিটিশ কম না। সবচ বড় কথা এই ব্রিটিশদের চেয়েও বড় ব্রিটিশরা নিরীহমুখে ঘুরে বেড়ায়, চট করে চেনা যায় না।

No comments: