গল্প- মারিয়া

মারিয়ার খুব রাগ হচ্ছে।
আয়নায় নিজেকে দেখছে আর রাগ বাড়ছে। তার পরনে সবুজ একটা শাড়ি। শাড়িতে তাকে কুতসিৎ লাগছে। আয়নার দিকে তাকিয়ে সে একটা ভেংচি দিল। কপালে একটা টিপ পড়া উচিত। সে খয়েরি একটা টিপ বেছে নিয়ে পড়ল। তাকে আরো কুত্‌সিৎ লাগছে। এই মরার শাড়ির সাথে কিছুই যায় না।
আজকে এই শাড়ি পড়ার জন্য ফরহাদ চাপাচাপি করছে। সেই কারনেই পড়া। ফরহাদের রুচি বলতে কিছু নাই। গাধা টাইপ মানুষ।সব কিছু তার কাছে সবুজ। যা সবুজ তাই সুন্দর এই রকম একটা ভাব। নইলে এইরকম একটা শাড়ি কিনে আনতে পারে? আর তার ওপর এই শাড়িটাই পড়তে হবে। মারিয়া মনে মনে বলল গাধা...
তার একদম ইচ্ছা করছে না। কিন্তু পড়তে তাকে হবেই। এর আগে একবার না করেছিল। ফল ভালো হয়নি। গাধা কি করে ফেলে ঠিক নাই।
একদিন ফরহাদ ফোন করে বলে
-মারিয়া আজ দুপুরে চলে আসো আমাদের ফ্লাটে।
-দুপুরে কেন?
-মা-বাবা গ্রামের বাড়ি যাবে।
-তুমি একলা থাকবে ?
-হু...চলে আসো...
-আসব না।
-কেন?
-তুমি বাসায় একলা আমি বুঝি না কিছু?
-দূর!!! এইরকম সুযোগ বারবার আসে?
-আমার সুযোগের দরকার নাই।
-তুমি আসো ...নাইলে আমি কিন্তু একটা কিছু ঘটিয়ে ফেলব।
-দেখি কি ঘটাও...আমি আসব না।
আসব না আসব না বলেও ঠিকই বিকালে চলে এল ফরহাদের ফ্লাটে। এসে দেখে বিশাল হইচই। ফরহাদের দোস্ত অনিক খুব দৌড়াদৌড়ি করছে। ডাক্তার এসেছে। ফরহাদকে হাসপাতালে নিতে হবে...
হাসপাতালে জ্ঞান ফিরে এলে মারিয়া প্রশ্ন করল ,
-তুমি বিষ খাইছ কেন মেয়ে মানুষের মত?
-আমি কি তোমার জন্য খাইছি নাকি?
-তুমি একটা গাধা। তুমি আমার জন্য খাও নাই?
-না।বাসায় কেউ নাই ভাবলাম কিছু বানিয়ে খাই।বেসনের বদলে ভুলে ইদুরের বিষ খেয়ে ফেলছি।
-তাই? ভুলে খাইছো? ইচ্ছা করে খাওনি?
-না। বললাম ত।
-তোমাদের ফ্লাট ত এগারো তলায়। অইখানে ইদুর আছে?
-তুমি যাও তো...আমার মাথাব্যাথা করছে।
-গাধা!
ফরহাদ সুস্থ হওয়ার পর তাকে এই শাড়িটি কিনে দেয়। সেই শাড়ি পড়ে আজ তারা দুইজন নদীরপাড়ে যাবে।
ফরহাদ পাঞ্জাবী পড়ে এসেছে। ফরহাদের পাশে মারিয়াকে আরো বিশ্রী লাগবে। মারিয়ার মন খারাপ হল একটু। ফরহাদ এসেই তাড়াহুড়ো শুরু করল। চলো...চলো...
মারিয়া আর ফরহাদ হাত ধরাধরি করে বসে আছে।সূর্য ডুবছে...লাল রঙের আকাশ। পানিতে ছোটছোট ঢেউ...মারিয়ার খুব ভালো লাগছে। মনে হচ্ছে যেন ফরহাদের সাথে বসে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া যায়। সে মনে মনে বলতে লাগল আমি ভালোবাসি।
ফরহাদ ফস্‌ করে বলল
-চল নৌকা করে ঘুরে আসি একটু।
-এইখানেই ভাল লাগছে।
-না। চল যাই।
-এই খানেই ভালো...আমার নৌকা চড়তে ইচ্ছে করছে না।
-না। চলো নৌকা চড়ি। নদী পার হয়ে অইপারে যাই।
-আমি যাব না। তোমার ইচ্ছে হলে যাও।
-আচ্ছা ঠিক আছে। আমি একাই যাচ্ছি।
ফরহাদ উঠে পড়ল। সে ঘাটের দিকে যাচ্ছে। মারিয়ার চোখে পানি চলে আসছে। ফরহাদ তাকে একা ফেলে চলে যেতে পারল?ফরহাদ নৌকার মাঝিকে কিছু বলছে। একবার মনে হল যেন ফিরে আসবে। কিন্তু না...সে নৌকায় উঠে বসল। নৌকা মাঝ নদীতে চলে গেল। মারিয়া মাথা নিচু করে আছে। তার চোখে পানি।
হঠাত চিৎকার ...মারিয়া মাথা তুলে দেখে ফরহাদ মাঝ নদীতে ঝাপ দিয়েছে। পাঞ্জাবী পড়েই সাতরিয়ে চলে আসল পাড়ে। মারিয়ার কাছে এসে থামল। মারিয়া মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।
-মারিয়া ।আমার দিকে তাকাও।
মারিয়া দেখে ফরহাদের চোখে ভিজে চশমা। বোকাটা ভিজে গ্লাসের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে আছে।
-তুমি কেদো না... আমি কোনদিন আর তোমাকে ছেড়ে যাব না।
-গাধা !



////////////////////////////////

আমার ফুটনোট-
এটা অনেকদিন আগে লেখা একটা গল্প(গল্প বললে মনে হয় বেশী বলা হচ্ছে)। তখন মারিয়া নামের একজনের সাথে নেটে পরিচয় মাত্র হয়েছে। তার নাম ব্যবহার করে এই গল্প লিখেছি। মারিয়া চরিত্রটার সাথে তার গভীর মিল। তাকে পড়তে দিয়েছি আর সে রেগে কাই। এটা একজন বিখ্যাত(বিকৃত যৌন রুচির)বাংলাদেশী লেখকের অনুকরন বলে আমাকে খুব ধমকিয়েছে। আমার সাথে তার যোগাযোগ এরপর থেকেই কমে গেলো। যাই হোক, যাকে নিয়ে লেখা তার অনুমতি ছাড়াই নেটে ছেড়ে দিলাম।

No comments: