ফিলিস্তিনীদের জন্য আমার সামান্য সমবেদনা ছাড়া আর কিছু নাই, ভালোবাসা সব অন্যত্র রেখেছি

০১
অফিসে আমার পাশেই বসেন শহীদুল্লাহ সাহেব। তিনি সেদিন বললেন ভয়াবহ এক কাহিনী। এলাকার এক রাজনৈতিক নেতা বাসার কাজের ছেলেকে মেরে ফেলেছে। এরপর নিজের ছেলেকে লুকিয়ে রেখে এলাকার সবার কাছে বলে বেড়িয়েছে, বিপক্ষ দল তার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। নির্বাচন জিতে সেই নেতা ...বড় নেতা হয়ে গিয়েছে রাতারাতি।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কাজের ছেলের মা-বাবা কিছু বললো না?
না স্যার! অই নেতা টাকা দিয়ে দিয়েছে বাপ-মাকে। টাকা পেয়ে আর ভয়ের চোটে ওরা আর কিছু বলে নাই।

০২
আমার বাসায় রান্না করে এলাকার এক বয়স পঞ্চাশের মহিলা। সে আমার জন্য তিনবেলা রান্না করে। বাসন-টাসন মেজে দেয়। প্রতিদিন মোটামুটি ঘন্টা তিনেক কাজ করতে হয়। তার বেতন মাসে তিনশ টাকা। তারমানে দিনে আমি তাকে দশ টাকা দেই। দশ টাকার জন্য সে তিনঘন্টা কাজ করে। দিনে তার আয় এক ডলারের কম, সুতরাং দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। আমি হিসাব করে দেখেছি ঘন্টায় এই মহিলার বেতন সাড়ে পাচ সেন্ট। আমার নিজের বেতন ঘন্টায় একডলার আট সেন্ট।

০৩
বাংলাদেশ কমন একটা ঘটনা লঞ্চডুবি। ডুবে যাওয়ার এত ভয় থাকার পরও কেন মানুষ দলে দলে উঠে লঞ্চে? উত্তরটা দিয়েছিল একজন বুয়া। আমাদের মেস থেকে তার আয় মাসে পনেরশ টাকার মত। ঈদের ছুটিতে তার বাসার সবার বাড়ি যেতে বাসে লাগে একহাজার টাকা (5X200), আসা যাওয়ায় শুধু ভাড়াই লাগছে দুই হাজার টাকা। লঞ্চে গেলে হাজারখানেকের ভিতর হয়ে যাচ্ছে। লঞ্চে যাওয়া ছাড়া উপায় কি?

যারা মারা যায় পত্রিকায় এক সপ্তাহের মত তাদের এবং আত্মীয়স্বজনদের ছবি থাকে। এরপর সব ভুলে যাই আমরা। আমার যতটুকু মনে আছে, এক বছরে বারশ এর মত মানুষ শুধু লঞ্চ ডুবিতে মারা যায়। (ফিলিস্তিনে হামলায় মৃতের সংখ্যা এখনো এত হয় নাই। টুইন টাওয়ারে কতজন মারা গিয়েছিল? )

০৪
আমার সমবেদনা ফিলিস্তিনী নারী-পুরুষ আর শিশুদের জন্য। আমার সমবেদনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কুত্তার মত মারা পড়া ইহুদীদের জন্য। আমার সমবেদনা ইরাকী জনগনের জন্য।

কিন্তু আমার ভালোবাসার কিছুই এদের জন্য নাই।যে পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষে করে জীবন ধারন করে আমার ভালোবাসা তাদের জন্য। যে মহিলা আমার বাসায় ঘন্টায় সাড়ে পাচ সেন্টের জন্য কাজ করে আর আমার কাছ থেকে প্রতিদিন পেয়াজ,মসলা এইসব চুরি করে নিয়ে যায়-আমার ভালোবাসা তার জন্য রাখা। যে বাবা-মা সামান্য টাকা বিনিময়ে সন্তানের মৃত্যু ভুলে যেতে বাধ্য হয়-আমার ভালোবাসা তাদের জন্য।
নিজের ঘরের মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা না বলে,তাদের জন্য কান্না-কাটি না করে-বাইরের কারোর জন্য আমি ভালোবাসা খরচ করতে পারি না। যে আরব ভাইদের জন্য আমার কান্না কাটি করা উচিত শুধু গরিব বলে তারা আমার প্রাপ্য সম্মান দেয় না। আমার শ্রমিক ভাইকে দেশে ফিরিয়ে দেয়। অর্থ আর নৈতিকতার নিদারুন অপচয় করার পর, মুসলমান ভাই বলেই আমার ভালোবাসার একটা অংশ ফিলিস্তিনীরা পেতে পারে না।

আমার ভালোবাসা নাই ফিলিস্তিনীদের জন্য। আমি বড়জোর সমবেদনা দেখাতে পারি। নিজের লড়াই তারা নিজেরা করুক। আমি তাদের জন্য নিজের একটা __ ও ছিড়ব না।






বিঃদ্রঃ- শেষ লাইনের শূন্যস্থানে চুলের হিন্দি শব্দ হবে।

No comments: