একটু ভালো করে বাচব বলে

ম্যাট্রিকে আমার মতামতের মুল্য ছিল না। বাবা-মা জোর করে সায়েন্সে দিয়ে দিল। আমি হাল্কা পাতলা বলেছিলাম আর্টস এ পড়ার কথা। কিন্তু মধ্যবিত্ত মা-বাবা সেটা শুনতে রাজি না। নটরডেমে চেষ্টা করলাম আর্টস এ ভর্তি হতে। সেখানেও দিল বাধা। বাবা-মা বলল, আমরা যতটুকু হয়েছি তোমাকে তার চেয়ে বড় হতে হবে।

আমি এইচ.এস.সি শেষ করলাম।এবার মা-বাবার ইচ্ছা ছেলে হবে ডাক্তার। আমি তখন চাইছি বাংলা বা ইতিহাস নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ব। আবার বন্ধুদের দেখা-দেখি বুয়েটের প্রতিও একটা মোহ কাজ করছিল।

আমাকে দুইটা মেডিকেলের কোচিং সেন্টারে ভর্তি হতে হল। ধুমাইয়া পড়লাম। মেডিকেলে কোচিং এর ফাকে বাব-মা কে না জানিয়ে ভর্তি হলাম বুয়েটের একটা কোচিং সেন্টারে। কিন্তু পাপ গোপন রাখতে পারিনি। ধরা খাওয়ার পর বাবা-মার মুখ কালো। একসপ্তাহের বেশী চালাতে পারলাম না বুয়েটের কোচিং। বাব-মা বুঝালো ডাক্তার হও। জীবন অনেক সহজ আর উন্নত হবে।

যথাসময়ে ভর্তি পরীক্ষাগুলো শেষ হয়। চান্স পাইছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক আর ঘ বিভাগে। চান্স পাইছি বুয়েটে। কিন্তু মেডিকেলে প্রথম লিস্টে নাই। ওয়েটিং লিস্টে আছি। আমি বাসায় মিন মিন করে বললাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলায় পড়ি...কোনো লাভ হল না। আমাকে ভালো করে বাচতে হবে। সবকয়টা অপশন চেক করে বুয়েটকে দেয়া হল গ্রীন সিগন্যাল। খুব বিরক্তি নিয়ে ভর্তি হলাম। সেই বিরক্তি এখনও যায়নি।

আমাকে একটু ভালো করে বাচতে হবে। আমি সিভিলে অনার্স শেষ করেছি। একটা চাকুরীও পেয়ে গেলাম মামু না ধরেই। সেটা ছেড়েও দিলাম আরেকটা ভালো চাকুরী পেয়ে। এখন আবার ছোটবেলার মত শব্দার্থ শিখছি।

GRE দিব। আরেকটু ভালো করে বাচার জন্য আমাকে বাইরে যেতে হবে।

আমি আরো ভালর জন্য সারা জীবন দৌড়েই গেলাম। এখনও দৌড়াচ্ছি প্রানপন। দৌড়াতে দৌড়াতে একদিন থমব। পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখব যে পথে আমি দৌড়ে এসেছি সেটা বড় অচেনা। সামনে যে মুলাটা ছিল ঝুলে সারা জীবন তার দিকে তাকিয়েই পার করে দিলাম।

যদি বুঝতেই পারি মুলার পিছনে দৌড়াচ্ছি তবে কেন এই দৌড়??? উত্তরটাও জানি...একটূ ভালো করে বাচব বলে...

No comments: