একটি সাধারন দিনের বিবরন

ভোর রাতে আমার ছোটবোনটাকে নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখলাম। আমি জীবনে যত দুঃস্বপ্ন দেখেছি তার বড় একটা অংশ আমার এই বোনটাকে নিয়ে।ঘুম ভেঙ্গে যাবার পর দেখি ভোর হয়নি এখনো। আর ঘুম আসল না। পিডিএ তে জোকস পড়া শুরু করলাম। পাচ মিনিট পরই ফজরের আজান দিল। তখন বুঝলাম আসলে ভোর মাত্র হচ্ছে। ভোর রাতে দুঃস্বপ্ন দেখলাম। মনটা কেমন কেমন করতে লাগল।

জোকস পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। সকালে মূসা সাহেব এসে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। তার একটা চিঠি টাইপ করতে হবে। খুব নাকি জরূরী। দাত না মেজেই উঠে গেলাম অফিসে। চিঠি টাইপ করে দিয়ে এসে দাত মাজলাম। নাস্তা করলাম।

এরপর আবার অফিসে দৌড়। টেন্ডারের কাজগুলা শেষ করতে হবে।
দুপুরের দিকে খেতে গেলাম বিয়ের দাওয়াতে।কলোনীর এক কর্মচারীর ছেলের বিয়ে। তাকে আমি চিনি না। ছেলেকে চিনি না। যে মেয়েকে বিয়ে করছে তাকেও চিনি না। কিন্তু দাওয়াত পেয়েছি। আমাকে যেতেই হবে। সকালেই জসিম সাহেব জানালেন, উপহার হিসাবে ক্যাশ টাকা দেয়া যাবে। আমি শিওর না কত টাকা দেয়া উচিত।

মূসা সাহেব জানালেন, পাচশ টাকা দেয়া উচিত। চিনি না, জানি না এমন কাউকে একবেলা খাওয়ার জন্য পাচশ টাকা দিতে আমার মন সায় দিল না।

আমি বললাম, তিনশ টাকা দেই? মূসা সাহেব হেসে ফেললেন। তিনশ টাকা আবার দেয়া যায় নাকি?
দুপুরের দিকে একটা খামে আমি পাচশ আর মূসা সাহেব পাচশ টাকা ভরলাম। একবার ভাবলাম, মূসা সাহেবের চোখ এড়িয়ে আমার পাচশ টাকার নোটটা সরিয়ে সেখানে তিনশ টাকা ভরে দেই। কিন্তু সেটা করার সুযোগ পেয়েও করতে পারলাম না।

বিয়ের অনুষ্ঠানে বেশ খাতির পেলাম। কিন্তু যখন আসার সময় খামটা দিতে গেলাম, খারাপ লাগল। পাচশটা টাকা শেষ। আমার অল্প বেতনের চাকুরিতে এইটা অনেক টাকা।
যাইহোক, দুপুরে শুয়ে শুয়ে ভাবলাম, আগামী চল্লিশ দিন বাজার থেকে রিকশায় না এসে হেটে আসব। এতে দুইশটাকা সেভ হবে। মনটাতে একটু সুখ আসল।

দুপুর শেষে আবার অফিস। শনিবার সরকারী ছুটির দিনেও এত কাজ করতে হচ্ছে তাই মেজাজ খারাপ ছিল। বিকালে জসিম সাহেবকে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। আর কাজ করব না। জসিম সাহবে বললেন কাছেই বনবিভাগের নার্সারী আছে। সেখান থেকে ফুল গাছের চারা কেনা যাবে। গেলাম সেখানে। সরকারি কাজকর্ম যা হয় আরকি। গাছ-টাছ কিছুই নাই। বনবিভাগের উপর আমার আর কোন ভরসা থাকল না।

সেখান থেকে গেলাম পুরান একটা জমিদার বাড়ি দেখতে। জমিদারদের বাড়ির নাম দালাল বাড়ি। সেই রকম জৌলুস ছিল তাদের এককালে। ভাঙ্গা বিল্ডিঙ্গগুলো তার অতীত গৌরবের সাক্ষী। এতবড় পুরানো স্ট্রাকচার আমি আগে দেখিনি। াড়িটা দেখেই প্রথম যে কথাটা মাথায় এলো- এতবড় ছাদ ধরে রাখার জন্য বীম আছে কি? নাকি ফ্লাট প্লেটের কোন একটা আদিম সংস্করন ব্যবহার করেছে? এতবড় ছাঁদ ধরে রাখার জন্য কলামের সাইজ কেমন ছিল? এই প্রশ্নগুলা মাথায় আসায়, নিজের কাছেই ভালো লাগল। আমি সবার প্রথমে একজন সিভিল ইঞ্জিনীয়ার।

সুন্দর একটা ছোট পুকুর। তার পাড়গুলা বাধাই করা ছিল একসময়। তার চিহ্ন পেলাম। কিন্তু চারিদিক হতে দখলকারীরা এগিয়ে আসছে। দিনে দিনে জমিদার বাড়ির সীমানা ছোট হয়ে আসছে। জসিম সাহেব দেখালেন পুরাতন বাড়িটার নিচে সুড়ংগ আছে, পালিয়ে যাবার জন্য। ( এই বাড়িটা নিয়ে পরে ব্লগ লিখব )

সেখান থেকে গেলাম বাজারে। বাজার থেকে হেটে আসার বদলে রিকশায় আসলাম। টাকা সেভ করার কথা মনে ছিল না।

আবার অফিসে এসে কিছু কাজ করলাম। রাতে নেটে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করে শুয়ে পড়লাম।



========================
আরেকটা বছর গেল। আরেকটা ভেলেন্টাইন ডে পার হয়ে গেলো। আমার কিছু করা হলো না।

No comments: