আমার চাকা ঘুরানোর ( চাকুরীর) দিনগুলি -০২

আমি জীবনের প্রথম নিজের সীল বানাই ক্লাস নাইনে থাকতে। আমার এক ক্লাসমেট এর ফ্যামিলী নতুন দোকান দিয়েছে রাবার- স্ট্যাম্প এর।
সে জানাল অতি সস্তায় সীল বানানো যাবে। আমরা কয়েকজন তার কাছে নাম-ধাম আর সামান্য টাকা দিলাম। পরের সপ্তাহে সে সীল নিয়ে এসেছে।
সেখানে লেখা MD Akhsanul Islam. Class IX/X. ক্লাস নাইন/ টেন লেখার কারন হল যেন দুই বছর ব্যবহার করতে পারি। ক্লাস নাইনে থাকতে সীল মারার পর X টাকে একটা টান মেরে কেটে দিতাম আর টেনে ঊঠে করতাম উলটাটা। অল্প বয়সে সীল হাতে পেয়ে যা হল তা যে আমি যেখানে সু্যোগ পাই সীল মারি। বইয়ের কভারে আর নাম লিখি না । সীল মারি। নোটের প্রতিটা পৃষ্ঠায় একটা করে সীল। গল্পের বইয়ের কভারে আমার নাম সীল মারা হল। একদিন আমাদের বাসায় একজন প্রফেসর আঙ্কেল আসছেন। তার চোখে পড়ল নানা জায়গায় সীল মারা। তিনি আমাকে ডেকে গম্ভীরভাবে বললেন
-" তুমি এমন কিছু হওয়ার চেষ্টা কর যেন সীলটার একটা দাম থাকে।"
আমি মাথা ঝাকিয়ে বলেছিলাম " জ্বি। চেষ্টা করব"
-শুনো যেন তেন লোকের সীল থাকে না।
-জ্বি আচ্ছা। আমি সীল বানাব না আর।

এর পরের সীলটা বানাই ছয়মাস পর।গোয়েন্দা সংস্থা আগেই খুলেছিলাম। কিন্তু অনেকদিন পর আমার আর দিলীপের মাথায় এলো আমাদের ত কার্ডই নাই। মনে হয় এই কারনেই আমাদের প্রসার জমছে না। সুতরাং কার্ড বানাতে হবে। ঠিক করা হল আমাদের প্রতীক। তিন গোয়েন্দা যেহেতু প্রশ্নবোধক চিহ্ন ব্যবহার করে তাই আমরা বেছে নিলাম আশ্চর্যবোধক চিহ্ন। আমাদের লক্ষ্য যেন আমরা তিন গোয়েন্দার সাথে মিলে না যাই। স্বাতন্ত্র্য লাগবে না?? :P
আমার ভাই আমাদের সংস্থাটাকে ডাকে দুই গুউউউএএএএ...নদা । তার মুখটাও বন্ধ করতে হবে। দোকানে গিয়ে খোজ লাগালাম। কার্ড করতে যা টাকা লাগবে শুনে আমি আর দিলীপ হতাশ। তখন হাতে বিশটাকা থাকলেই আমরা টাটা-বিড়ালার মত ভাব মারি। B-) কার্ড বানানোর খরচই দিতে পারব না। সিদ্ধান্ত নিলাম সীল বানাব। তারপর আর্ট পেপার
( আসলে ড্রইং পেপার, তখন অই নামেই ডাকতাম) কার্ডের সাইজে কেটে সীল মেরে নিব। অনেকগুলো কার্ড খুব সস্তায় বানানো গেল। যদিও সেগুলো কোন কাজে এসেছে কিনা মনে পড়ে না। শুধু মনে পড়ে একবার বাংলা ম্যাডাম আমার বইয়ের ফাকে কার্ড দেখে খুব হেসেছিলেন। ক্লাস শুদ্ধ ছেলেরা হেসেছিল। আমি অবশ্য ম্যাডামের ওপর রাগ করিনি। উনি দেখতে খুব সুন্দর ছিলেন কিনা তাই। :D

এরপর সীল বানিয়েছি সত্যায়িত করার জন্য। পাশ করার পর আবিষ্কার করলাম যেখানেই আবেদন করি সত্যায়িত করে সার্টিফিকেট দিতে হয়। বেসরকারি যত জায়গায় আবেদন করেছি নিজেই করেছি সত্যায়িত। সরকারি চাকুরি যেমন বি.সি.এস এর আবেদন করার সময় সত্যিকারের সত্যায়িত করিয়েছি। আর মেজাজ খারাপ হইছে খুব। যাকে সত্যায়িত করতে দিচ্ছি তার ভাব দেখলে মেজাজ ঠান্ডা রাখা কঠিন।

আমি এখন প্রথম শ্রেনীর সরকারি কর্মকর্তা। (এতক্ষনে অরিন্দম আসল বিষয়ে এলো... এতক্ষন পারছি ফাও প্যাচাল :P)

বাব-মার জোর করে পাঠিয়ে দিয়েছে সরকারি কাজে। আমি আসতে চাইনি। জয়েন করার পর শুনলাম আমি অফিসার। সরাসরি অফিসার হয়ে বসেছি। একজনকে জিজ্ঞেস করলাম
-তারমানে কি আমি সত্যায়িত করতে পারব?
-খুব পারবেন স্যার।
আমি লাফ দিয়ে উঠে হুররররররাহহহহ বলেছি। কিন্তু সেটা মনে মনে। একজন অফিসারকে অধস্থনদের সামনে মুড মেরে বসে থাকতে হয়।

সত্যায়িত করতে পারটা আমার কাছে বিশাল ব্যাপার। অন্যরা হয়ত বলবে এটা আর এমন কি? আমি বলব এটা আমার কাছেও কিছুই না। আবার সবকিছু।
আজকে বিকালে শ'তিনেকের মত সই করেছি। হাত ব্যাথা হয়ে গেছে সই করতে করতে। কিন্তু মনে বিরক্তি আসেনি একবারের জন্যেও।

No comments: