চাকা ঘুরানোর দিনগুলি

প্রথমেই প্রাসঙ্গিক একটি বহু পুরানো ঈসপের গল্প বলে নেই। এক কৃষকের গরু হারিয়েছে। সে সারা গ্রাম খুজে খুজে হয়রান। কোথাও খুজে পাওয়া গেল না। দিনশেষে গ্রামের প্রান্তে সে হাটু গেড়ে বসে বলল " খোদা ! যে আমার গরূটা চুরি করেছে তাকে শুধু আমার সামনে এনে দাও। আমি ছাগল কোরবানী দিব তোমার নামে।"
তার প্রার্থনা শেষ না হতেই পাশের ঝোপ থেকে এক সিংহ বের হয়ে এল। আবার কৃষক প্রার্থনা শুরু করল। খোদা! সিংহ সরাও। দুইটা খাসী কোরবানী দিব।
আমি বছর দুয়েক ধরে লক্ষ্য করছি খোদা আমার যে কোন প্রার্থনায় খুব ভালো সাড়া দেন। কিন্তু সবসমই আমার অবস্থা ঈসপের কৃষকের মত হয়। আবার উলটা প্রার্থনা করতে হয়।

ঘটনা-১
তখন ৪-২ তে আছি। কয়েকসপ্তাহ পর ছাত্র-জীবনের ইতি হবে। থিসিস , চারটা টিউশনী মিলিয়ে আমি মোটামুটি বিধ্বস্ত। খোদার কাছে প্রার্থনা করলাম খোদা! একটা গজব দাও ! যেন বুয়েট ছুটি হয়ে যায় সপ্তাহ খানেকের জন্য। আমি বাড়ি ঘুরে আসি। emotionally recharged হই।
প্রার্থনায় ফল হল সপ্তাহ খানেকের ভিতর। ছাত্র-বিক্ষোভ-জলপাই ! সবাই জানেন কি হয়েছিল। হল খালি করতে হল। আমি হাসিমুখে বাড়ি চলে এলাম। বন্ধুরা ছাড়া কি আর ছুটি জমে? তাই আমার ছুটিটাকে আনন্দময় করতে ঈশ্বর আমার সমস্ত বন্ধুদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও বন্ধ করে দিলেন। আমি খুশী।
বিছানায় গড়াগড়ি করে। কিছুই না করে অনেকদিন গেল। আস্তে আস্তে দেখি গড়াগড়ি করতে আর ভালো লাগে না। দোস্তদের সাথে প্রতিদিন আড্ডা হয়। তবুও ভালো লাগে না। মাসখানেক পর আমি বললাম খোদা! এই ছুটি আর সহ্য হচ্ছে না। তুমি বুয়েট খোলার ব্যাবস্থা কর।
ঘটনা-২ হুমায়ুন আহমেদের একটা উপন্যাস পড়ে বেশ ভালো লাগল। তেতুল বনে জোছনা। নায়ক ডাক্তার। তার গ্রামে পোস্টিং। সেই গ্রামে ধীরে ধীরে সে পরিবর্তন নিয়ে আসে। পড়ে আমার মনে হল আহা! পাস করার পর যদি আমার দূরে কোথাও পোস্টিং হত ! সেখানে নিরিবিলিতে একান্তে না জানি নিজের কোন এক অচেনা চেহারা বের হয়ে আসত। আমি একটা নৌকা কিনব। একটা কুত্তা পালব। কোন বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারি না। গীটার বা একটা কিছু শিখব। আমি খোদার কাছে চাইলাম এই উপন্যাসটার নায়কের মতই কিছু একটা হোক আমার জীবনে।
পাস করার পর বছর ঘুরল না। খোদা সম্প্রতি আমার প্রার্থনা শুনেছেন। একটি সরকারি চাকুরী হয়েছে। পোস্টিং লক্ষীপুর। খোডা আয়োজন পুরা করে এনেছেন। কিন্তু এখন ঢাকা ছেড়ে যেতে আমার মন চাচ্ছে না। বাবা ত খুবই খুশী সরকারি চাকুরী পাওয়ায়। এখন আমি যে চাকুরী করি সেটা বাংলাদেশের অন্যতম আরামের একটা চাকুরী। কিন্তু সেটা সরকারি নয়। আমি ইচ্ছে বাইরে থেকে মাস্টার্স শেষ করে আসব। অনেক পড়া এখনো বাকি। এদিকে যারা নিয়োগ পেয়েছে সরকারি চাকুরিটাতে তাদের ভিতর আমার বয়স খুবই কম এবং মেধা তালিকায় আমার স্থান একেবারে প্রথম দিকে। সবমিলিয়ে বাবা-মার আশা আমি নিদেনপক্ষে DG না হয়ে অবসরে যাব না। আর আমি ভাবি GOD works in very mysterious way.
আমি যা চেয়েছিলাম সেটা পাচ্ছি। আমার বাবা-মা যা চেয়েছিলেন সেটাও পাচ্ছি। কিন্তু খোদা ছোট্ট একটা খেলা দিয়ে রাখলেন। খোদা আমাকে যেন বলছেন তুমি যা চাইছো সেটা দিচ্ছি কিন্তু দেখি তুমি সেটা নিতে পারো কিনা?

No comments: