রহিম মিয়ার কান্না এবং আট বছরের ময়না

০১
ময়নার বাপ রহিম মিয়া বাজারের সবার সামনে গালে থাপ্পড় খেলো। গরিব মানুষের ইজ্জতের দাম নাই। এই রকম থাপ্পড় সে কত খেয়েছে। কিন্তু এইবার ময়না তার সাথে ছিল। সে তার নিরীহ চোখ দুইটা তুলে বাপকে দেখল। কোনদিন যা হয় নাই আজকে তাই হলো। রহিমের চোখে পানি চলে আসল।
তাকে থাপ্পড় মেরেছে বাজার কমিটির চেয়ারম্যান। রহিম মিয়া মাথা নিচু করে চোখের পানি লুকাতে চেষ্টা করল।
-তোরে যদি আবার বাজারের কোনায় ভিক্ষে করতে দেখি, ত খবর আছে।
রহিম মাথা নিচু করেই ঘাড় নাড়ল। সে আর ভিক্ষে করবে না।
-মাথা নাড়সা ক্যান? মুখে বলোন যায় না?
কমিটির চেয়ারম্যান আরেকটা থাপ্পড় মারল। থাপ্পরের পরপরই ময়না তার বাপের হাত ধরে ফেলল। তার হাতে একটা শিশুর হাতের চাপ পড়ার পরই চোখের পানি যেন আরো বেড়ে যেতে লাগল।
-আর ভিক্ষ্যা করমু না।
চেয়ারম্যান আবার থাপ্পড় মারলেন একটা। এরপর বললেন, মনে থাকে যেন। চোরের গুষ্ঠি সব কয়টা।

রহিম মিয়া থাপ্পড় খাওয়া শেষে ময়নাকে নিয়া বাজারের একটা চায়ের দোকানে ঢুকে পড়ল।

০২
রহিম মিয়ার কপাল খারাপ। ময়নার সামনে সে আবার থাপ্পড় খেলো। সে ভিক্ষে করা থামায় নাই। কমিটির চেয়ারম্যান বাজারে তাকে ধরে ফেলেছেন।
-তোর শিক্ষা হয় না?
রহিম মিয়া আবার কয়েকটা থাপ্পর খেলো। ময়না থাপ্পরের এই সময়টাতে তার বাপের হাত ধরে রাখল। এতে রহিম মিয়ার চোখে পানি চলে আসল। গভীর মমতা নিয়ে ময়না তার বাপের হাত ধরে আছে।
থাপ্পড় দেয়া শেষে, ময়না তার শান্ত চোখ দুইটি তুলে চেয়ারম্যানকে বলল, বাপেরে আর মাইরেন না।

০৩
গরীবের ইজ্জতের দাম নাই। রহিম মিয়ারও ইজ্জত নাই। কতবার কত মানুষের মার খেলো। কখনো চোখে পানি আসে নাই। ছোটবেলায় সবজি চুরি করত । ধরাও পড়ত মাঝে মাঝে । মালিক দিত মার। সেই মার খেয়েও কোনদিন রহিম কাদে নি। দোস্তরা বলত, রহিমের দিল পাত্থরের লাহান। চোক্ষে পানি আহে না।
সেই পাত্থর দিল রহিম মিয়া ইদানীং দুই-তিনটা থাপ্পড় খেয়েই কেদে দিচ্ছে। রহিম মিয়া বুঝতে পারে, ময়না তার পাশে থাকলে কোথা থেকে জানি তার লজ্জা চলে আসে। ব্যথার জন্যে সে কাদে না। লজ্জা পেয়ে কাদে।

০৪
রহিম মিয়া ঠিক করে আর ভিক্ষে না। সে রিকশা চালাবে । ময়নার মুখের দিকে তাকিয়ে সে ভাবে, ইজ্জতের সাথে বাচতে হবে। এইভাবে চলা যায় না ।

০৫
রহিম মিয়া কতদূর যেতে পারে রিকশা চালিয়ে তা এখনই বলা যায় না। সে একদিন রিকশা গ্যারাজের মালিক হতে পারে। এরপর হয়ত সি.এন.জি কিনে সেই ব্যবসা শুরু করবে। এরপর একদিন বাস সার্ভিস চালানো শুরু করবে। রহিমের উত্থান হতে পারে।
আবার এমন হতে পারে, ময়না মারা যাবে আগামী বছর। বাসের নিচে পড়ে। ছোট মেয়েরা ত রাস্তার পাশে খেলে। বাসের নিচে কি সে পড়তে পারে না? রহিম মিয়া আবার ভিক্ষের জীবনে ফিরে যাবে। কমিটির চেয়ারম্যান মাঝে মাঝে তাকে থাপ্পড় দিবে। তবু সে ভিক্ষে থামাবে না।

০৬
আমি গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি। ময়নার কি হয় সেটা জানার জন্য। রহিম মিয়া ভিক্ষে করা থামায় নাকি সেটা জানার জন্য।

No comments: