আমার ছোটভাই......

আমার ছোট ভাই, আতিক, অনেক ক্ষেত্রেই আমার চেয়ে বেশী দক্ষ। সে আমার চেয়ে ভালো গেম খেলে, আমার চেয়ে জোরে দৌড়ায়। ছোটবেলায় অন্যদের সাথে মারামারি করতে গেলে সে আমাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। আমার চেয়ে ভালো ফুটবল খেলে ( বাস্তবে এবং কম্পিউটারে)। কিন্তু এসবের চেয়েও বড় পরিচয়- সে আমার চেয়ে ভালো মানুষ। একটা উদাহরন দেই।

গরীবের ঘোড়া রোগের মতই আমার একদা একটি PDA কেনার শখ চাপল। পেপারে খুব সস্তা চাইনিজ পিডিএ এর বিজ্ঞাপন দেখে হাজার সাতেক টাকা নিয়ে গেলাম কিনতে একটা। দোকানে সামান্য সময় নাড়াচাড়া করেই বুঝলাম এইটা আসল “মাল” না। এতে হবে না।
কিছুদিন ঘুরলাম সেকেন্ড হ্যান্ড কিছু পাওয়া যায় কিনা তার আশায়। আতিক বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে গিয়ে পিডিএ এর খোজ নিয়ে আসল। HTC ব্র্যান্ড এর। দাম বাইশ হাজারের মত। দাম শুনেই বুঝলাম- এই জিনিস কেনা আমাদের সাধ্যের বাইরে।
পরের কিছুদিন নেটে সেকেন্ডহ্যান্ড কিছু সেট খুজছি। হাজার দশেকে ভিতর সেকেন্ডহ্যান্ড পাওয়া যেতে পারে এমন সব সেটের প্রোফাইল সেভ করে রাখছি। আতিক একদিন পিসিতে দেখলো সেইসব ফাইল। পরদিন বিকালে আমি চুল কাটিয়ে বাসায় এসে দেখি আমার জন্য অপেক্ষা করছে HTC এর একটা টাচ স্ক্রীন পিডিএ।
-টাকা পাইলি কই?
-টাকা ছিল না, কিস্তিতে কিনে আনলাম তোর জন্য। ছয় মাসের ভিতর শোধ হয়ে যাবে।

সেই HTC এর সেট, গরীবের একমাত্র ঘোড়া – খুব গর্বের সাথেই আমি ব্যবহার করতে লাগলাম। কিন্তু ছয় মাস পার হবার আগেই, কিস্তির টাকা শোধ হবার আগেই- সেটটার স্ক্রীনটা ফাটিয়ে ফেললাম। জানা গেল সেটটা ঠিক করতে বার হাজার টাকা লাগবে। আমি বুঝলাম আমার ঘোড়ার চারপা-ই ভেঙ্গে গেছে।

দুই তিন মাস পরের কথা। আমার হাতে কিছু টাকা জমেছিল -ঈদের বোনাস আর বেতন থেকে জমানো টাকা। আতিককে একদিন হাজার বিশেক টাকা দিয়ে বললাম, আমাকে HTC কিনে দিয়েছিলি। তোকে দিলাম এই টাকা। এইবার তুই কিন।
দুইভাই মিলে কয়েকটা সেট দেখে আসছি।পছন্দ হলো না। আমি ঢাকার বাইরে চাকরি করি। প্রতি সপ্তাহে অবশ্য আসা যাওয়া করি। তাই বলে গেলাম, তুই কিছু একটা কিনে নিস। পরের সপ্তাহে এসে দেখব কি কিনলি।
পরের সপ্তাহে এসে দেখি আতিক নিজের জন্য না কিনে , আমার জন্য আরেকটা মোবাইল কিনে নিয়ে আসছে। তার চোখে পড়েছে, আমার HTC নষ্ট হবার পর- অন্য মোবাইল ব্যবহার করতে সমস্যা হচ্ছে।

অথচ সে তার নিজের মোবাইলের সুইচ খুলে যাওয়ায় সুপার গ্লু দিয়ে জোড়া দিয়ে ব্যবহার করে।


পিঠাপিঠি ভাই বোন থাকায় ছোটবেলা থেকেই আমাকে আলাদা খাটে থাকতে হয়। যতদূর মনে পড়ে ক্লাস ওয়ানে পড়ার আগে থেকেই আমি একলা খাটে থাকি। আমার মা আমার সাহসের কিছু গল্প করেন। আমি নাকি কিছুতেই একলা থাকতে ভয় পেতাম না। পরবর্তীতে আমার ভাই এসে আমার সাথে যোগ দেয়। আমরা দুইজন আলাদা খাটে থাকতাম। বাবা মায়ের সাথে আমার ছোটবোনটা থাকত।

আতিক মাঝে মাঝে রাতে ভয় পেয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়ত। সে নাকি কিছু দুঃস্বপ্ন দেখত। সেইসব স্বপ্নের খুব পরিস্কার ব্যাখ্যা দিতে পারত না। খালি একটা ফিতা আর সেটা প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে সে আটকা পড়ে যাচ্ছে- এমন কিছু দেখত। আমিও ছোটরা সচরাচর দেখে এমন কিছু দুঃস্বপ্ন দেখতাম। ঘুম থেকে উঠে আমারো খুব ভয় লাগত। কাদতে ইচ্ছে করত। কিন্তু একটু অদ্ভুদ ব্যাপার ছিল কাউকে স্পর্শ করে থাকলেই আমার ভয় কেটে যেত। ছোটভাইটা কাছে থাকায়, আমি রাতের দুঃস্বপ্নের শেষে তার হাতটা শুধু স্পর্শ করে রাখতাম। এতেই আমার ভয় কেটে যেত। খাটের নিচের অশরীরীরির ভয় কেটে যেত শুধু রক্ত মাংসের জীবন্ত মানুষের স্পর্শেই। এইকারনে আমি খুব সাহস দেখাতে পারতাম। মায়ের ধারনা ছিল তার বড় ছেলেটা ছোটটার মত এত ভীতু নয়।

আমি এখনো রাতের বেলা দুঃস্বপ্ন দেখি। বুয়েটের হলে থাকার সময়ও দেখতাম। তখনো দুই ভাই এক রূমে থাকি। প্রচন্ড ভয় পেয়ে জেগে উঠতাম। আমার বেড থেকে উঠে তার পাশে গিয়ে বসে থাকতাম কয়েকমিনিট। আমার সমস্ত ভয় চলে যেত।
ইদানীং ভয় পেয়ে জেগে উঠলেও আতিককে আশে পাশে কোথাও পাই না। কঠিন দুনিয়ায় টিকে থাকার চেষ্টায় দুইজন দুইদিকে ছুটে যাচ্ছি। এখনো ভয় পেয়ে রাতে ঘুম ভাঙ্গে। এখনো আমি মনে মনে ভাবি, আমার ছোট ভাইটা আমার পাশেই আছে। তার হাতটা ধরতে বড় ইচ্ছে হয়।

=======================
আজ আতিকের জন্মদিন। রাতে ভয় পেয়ে তাকে স্পর্শ করে থাকার কথাটা এতদিন বলিনি, আজকে বললাম।

কৌতুক ( যথারীতি ১৮+)

০১.
আমেরিকা প্রবাসী এক ইটালীয় ফ্যামিলির মেয়ে যাচ্ছে জীবনের প্রথম ডেটে। তার দাদী তাকে ডেকে বলল, শুনো। ছেলেটা তোমার হাত ধরতে চাইবে- তুমি কিন্তু সহজে হাত ধরতে দিবে না। তোমার এই কাজে আমাদের পরিবারের অসম্মান হবে।
-আইচ্ছা দাদী।
-ছেলেটা হয়ত তোমাকে চুমু খেতে চাইবে- খবরদার রাজি হবে না। আমাদের পরিবারের এতে অসম্মান হবে।
-ঠিক আছে।
-ছেলেটা হয়ত তোমার __ হাত দিতে চাইবে- খবরদার সুযোগ দিবে না।
-হুমম। দিব না সুযোগ।
-ছেলেটা হয়ত তোমার উপর শুইতে চাইতে পারে- খবরদার রাজি হবে না। আমাদের পরিবারের চরম অসম্মান হবে এতে...

মেয়ে ডেট শেষ করে বাসায় আসছে।
-ও দাদী তুমি ত সত্য বলছিলা। সে আমার হাত ধরছে।
-অপমান!!! তারপর?
-চুমুও দিছে।
-হায় খোদা!!! ___ এ হাত দিয়েছে?
-হুমম।
-এরপর?
-সে যখন আমার উপর শুইতে চাইছে- আমি রাজি হই নাই।
-সাবাস!
-হ!! আমি আমার পরিবারের অনেক অসম্মান সহ্য করছি। শেষে নিলাম শোধ। আমি তার উপর চড়ে বসে তার ফ্যামিলির চরম অপমান করে এসেছি।


০২.
মরার পর স্বর্গে গিয়েছে লিসা।স্বর্গের দারোয়ান, পল, লিসাকে স্বাগতম জানাতে এসেছে।
পলঃ নিয়ম অনুযায়ী স্বর্গে ঢুকার আগে তোমাকে একটা শব্দের বানা জিজ্ঞেস করা হবে। না পারলে কিন্তু স্বর্গে ঢুকতে পারবে না।জাস্ট নিয়ম রক্ষার্থে প্রশ্ন করব। তুমি আর তোমার জামাই খুব ধার্মিক। যেহেতু দুনিয়াতে খুব ভালো জীবন যাপন করেছো- তোমাকে সহজ প্রশ্ন করি- cat বানান কর।
- C-A-T
- ঠিক হইছে। আসো স্বর্গে প্রবেশ করো।
কয়েক বছর পর, পল জরুরী কাজে যাবে- তাই লিসাকে দায়িত্ব দিয়ে গেল স্বর্গের দারোয়ান হবার জন্য। লিসা দায়িত্ব নিয়েই দেখে তার স্বামী বব আসছে।
-হাই বব!
-হাই!
- আমি মারা যাবার পর খুব কষ্টে ছিলে নাহ?
-প্রথম বছর খুব কষ্ট হয়েছিল। এরপর রুবিকে বিয়ে করলাম। এরপর আর কষ্ট ছিল না।
-তাই?
- রুবি আর আমি মিলে এশিয়া ঘুরলাম। আরো অনেক মজা করেছি... আহা শেষ জীবনটা খুব আনন্দে কেটেছে...
-আচ্ছা। সেই কাহিনী শুনা যাবে। এখন একটা শব্দের বানান জিজ্ঞেস করব তার উত্তর দাও। ভুল উত্তর দিলে কিন্তু ঢুকতে পারবে না।
-তোমাকে কি জিজ্ঞেস করছিলো?
-CAT
বব হাসিমুখে বলল, ঠিক আছে। আমাকে প্রশ্ন করো...
-বানান করো- চেকোস্লোভাকিয়া।

প্রেম যে তবুও প্রেমঃ স্বপ্ন নিয়ে বেচে রবে, বাঁচিতে সে জানে

০১.
শনি আখড়া থেকে মাতুয়াইল যাবার পথে একবার দেখি মুরগির দোকানের সামনে একটা বড় পলিথিন বিছানো। সেখানে মুরগির শরীরের চামড়া আর কিছু হাবিজাবি অংশ বিছানো আছে।ফার্মের মুরগি প্রসেস করার পর চামড়া আর কিছু অংশ বেচে যায়। ক্রেতারা কেউ সেই অংশ চেয়ে নেয় না। ডেসিং করা মুরগি পলিথিনে ভরে নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে কিছুই ফেলা হয় না। এই আপাত অপ্রয়োজনীয় অংশও বিক্রি হয়। দোকানের সামনে গরুর গোশত কুরবানীর ঈদের সময় যেভাবে ভাগ করে রাখা, সেইভাবে ভাগ করে রাখা আছে। দেখে মনে হচ্ছে, এক এক ভাগ করে বিক্রি হচ্ছে সেই সব। কোন ক্রেতা দেখি নাই আশেপাশে। তবে বিক্রি যে হয় এইসব বস্তু –সেটা ত নিশ্চিত।

বিভিন্ন টক শো এবং পত্র পত্রিকায় আমি কিছু মানব-দরদী মানুষকে দেখেছি, এই প্রশ্ন করতে, আমাদের দরিদ্র মানুষদের আমিষের চাহিদা কিভাবে পূরন হয়? বেশিরভাগ ফকির নাকি কুরবানীর ঈদ ছাড়া গোশতের দেখা পায় না। কিন্তু যে শিশুগুলো বড় হচ্ছে সমাজের অন্তজ অংশে- তাদেরও ত আমিষের চাহিদা আছে। আমিষ না পেলে তারা বড় হবে কিভাবে?

সেইদিন আমি আমিষের একটা উৎস এর কথা জেনে আসলাম। এরাও তাহলে মুরগি(!) খেয়ে বড় হয়...

০২
চাঁদপুরের অফিস পাড়ায় রাস্তার পাশে একটা কারিগর আছে। পেয়াজু-আলুর চপ-ছোলা বিক্রি করে রাস্তার পাশে। আমি একদিন কি মনে করে যেন খেলাম একটা চপ। চপ মুখে দিয়ে মনে হলো, এই খাদ্যের উৎস পৃথিবী নয়। বেহেস্তের ফেরেশতারা এই খাবার বানাচ্ছে। সামান্য দুই টাকা করে দাম। কিন্তু ভিতরে মাংসের একটু আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আলুর যা দাম এরপর মাংশ দিয়ে ভেজে বিক্রি করে সে লাভ করছে কিভাবে আমার মাথায় ঢুকল না। তবে একটা জিনিস বুঝে গেছি সাথে সাথে। আমাকে এই বস্তু বার বার খেতে হবে। সেইদিন আমি গোটা দশেক চপ খেলাম।
এরপর থেকে যখন আমি ছুটিতে চাদপুর যেতাম, সেই দোকানটা খুজে বের করে চপ খেতাম। প্রতিদিন খেতে খেতে এমন অবস্থা হত যে, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা শুরু হত। এরপরেও থামাতাম না।

একদিন কথা প্রসঙ্গে চাদপুরের কিছু বন্ধুকে বলছিলাম সেই দোকানের কথা। নাসিম নামের আমার সেই বন্ধু চপ খাবার কথা শুনে বলল, করছোস কি!! হারামজাদারা ত ফার্মের মুরগির চামড়া দিয়ে এই চপ বানায়।

তার মামা বা কাকা ফার্মের মুরগির ব্যবসা করে। এই ধরনের চপ-ছোলা বিক্রেতারা নাকি রাতের বেলা এসে মরা মুরগি আর ড্রেসিং করা মুরগির চামড়া আর হাবিজাবি অংশগুলা কিনে নিয়ে যায়। পরদিন সেগুলো দিয়ে চপ বানায়...

এই কথা জানার পর কয়েকটা ছুটি গেল। আমি চপ খেতে যাই না। একদিন ক্ষুধার্ত বিকেলে সেই দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছি। ভাজার আওয়াজ আর গন্ধ পাচ্ছি। গন্ধে মাতোয়ার হয়েই ঠিক করলাম, একটা খেয়ে দেখি। শুধু একটা খাব।
একটা খেলাম। এরপর মনে হল, যাহা বাহান্ন তাহাই তিপ্পান্ন। একটা খেলাম- দুইটাও খাই। দুইটা খাওয়ার পর, আরো কয়েকটা খেলাম। এরপর আরো খেলাম...


পুরান ভালোবাসা ফিরে আসল... ভালোবাসার জোয়ারে সব ঘৃনা ভেসে গেলো...


০৩
আনিসুল হকের উপন্যাস পড়ছি। নাম- এতদিন কোথায় ছিলেন। জীবনানন্দকে নিয়ে লেখা উপন্যাস। বেচারা নতুন কোন তথ্য জোগাড় করতে পারে নাই। কয়েকটা বই পড়ে- সেগুলোর থেকে একটা সারাংশ টাইপ তৈরী করে জিনিস দাড় করিয়েছে। সে জানে ভিতরে মাল কম, তাই আকর্ষনীয় করার জন্য জীবনানন্দের যৌন জীবনের কথা লিখে দিয়েছে। কিভাবে বেচারা বউয়ের কাছ থেকে রাতে লাত্থি খেয়ে সোফায় বসে বসে হস্ত মৈথুন করেছে- তার বর্ননা আছে।

জীবনানন্দ চাকুরী জীবনে ব্যর্থ- প্রেমিক হিসাবে ব্যর্থ। আমরা সবাই সেটা জানি। কিন্তু স্বল্প-পরিচিত কোন এক কবি ভক্ত রমনীর কথা ভেবে ভেবে রাতের বেলা হস্ত মৈথুন করছে- এটা কোনদিন ভাবি নাই। এতবড় looser ছিল ব্যাটা। আনিসুল হকের উপন্যাসটা পড়ে মনে হল, ধূসর পান্ডুলিপির কোন কবিতা আর পড়তে ভালো লাগবে না। ব্যাটাকে হাজার বছর ধরে পথ হাটা কবি বলে মনে হচ্ছিল না। বরং মনে হচ্ছিল লুঙ্গিতে ভেজা দাগ লুকিয়ে রাখার চেষ্টায় ব্যস্ত এক মধ্য বয়সের লুল পুরুষ।

কয়েকদিন পর জীবনানন্দ সমগ্র পড়ার সুযোগ এলো। রূপসী বাংলার একটা কবিতা পড়তে শুরু করেছি- হঠাৎ আবিষ্কার করলাম- সেই পুরানো আবেগ- সেই ভালোবাসা ফিরে আসছে। আশ্চর্য যে এতকিছু জানার পরও ভালোবাসার কোন কমতিবোধ করলাম না। গভীর আবেগে রুপসী বাংলার কবিতা পড়লাম। চোখ ভিজে আসল...


[ এরপর হতে আমি আসিনুলের আর কিছু পড়ব না বলে ঠিক করেছি। এমনিতেও আমি আনিসুল হকের কোন বই কিনে পড়ি না। নেট থেকে নামিয়ে পড়ি। নতুন প্রতিজ্ঞা হলো, নেট থেকে নামিয়েও আর আনিসুল হকের কিছু পড়ব না। বদের হাড্ডি আনিসুল হক আমার ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে আজে বাজে কথা বলেছে... ]

অতি সহজ ভাষায় বিবর্তনের ব্যাখ্যা (ডারউইনকে গালি দেবার আগে জানুন তার থিওরী)

Fact- 01
প্রতিটি প্রানি বংশ বৃদ্ধি করে গুনিতক হারে। ম্যালথাস যাকে বলেছেন জ্যামিতিক হারে। জীব বিজ্ঞানে এটিকে জনন-অপব্যয়িতা বলা হয়।

ব্যাখ্যা-
আপনার একুরিয়ামে যে গোল্ড ফিস আছে সেটা একবারে এক হাজারের বেশি ডিম পাড়ে। বলা বাহুল্য সবচেয়ে অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশেও একটা গোল্ড ফিসের এক হাজার বাচ্চা বেচে থাকতে পারবে না।
একটা মাছি একবারে ডিম পাড়ে ১২০-১৫০ টি ডিম।
একটা ঝিনুক পাড়ে একশ মিলিয়ন ডিম।
ফিশন পদ্ধতিতে একটি ব্যাক্টেরিয়া ভেঙ্গে দুইটা পরিনত হয় মাত্র বিশ মিনিটে। ছয় ঘন্টায় একটা ব্যাক্টেরিয়া থেকে ২,৬২,১৪৩ টা হয়ে যাবে। চব্বিশ ঘন্টার ভিতর এই সংখ্যা হবে 4.72 E+21 ।

fact ০১ এর সাথে একমত না হবার কোন যৌক্তিক কারন নাই। যদি একমত হন এরপর দ্বিতীয় fact এ চলে আসি।

fact-০২
বার্ষিক সামান্য হ্রাস বৃদ্ধি এবং মাঝে মাঝে বড় রকমের হেরফের ছাড়া একটি নির্দিষ্ট স্থানে জীবের মোট সংখ্যা কম বেশি একই থাকে কারন একটি সুস্থিত পরিবেশে সম্পদ( খাদ্য, প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান, পরিবেশ ইত্যাদি) সীমিত থাকে।

ব্যাখ্যা-
একটি সীমানা দ্বারা রক্ষিত বনের ভিতর গাছের সংখ্যা সারা বছর একই থাকবে। একটি কৃত্রিম বনে আপনি চাইলেই ইচ্ছে মত ঘন করে গাছ লাগাতে পারবেন না। যদি চেষ্টা করেও থাকেন, সীমিত সংখ্যক গাছই টিকে থাকবে। বাকিরা বড়ই হতে পারবে না।

একইভাবে প্রানীর ক্ষেত্রেও বলা যায়, সুন্দরবনে বাঘের ঘনত্ব বাড়তে পারে না। ধরা যাক, একটা এলাকায় দুইটা বাঘ থাকে, আপনি আরো দুইটা এনে ছেড়ে দিলেন।বাঘ বেড়ে যাওয়ায়, হরিনের উপর চাপ পড়বে। বেশি সংখ্যক হরিন মারা গেলে, হরিনের সংখ্যা যাবে কমে। ফলাফল। বাঘের যখন বাচ্চা হবে কিছু সংখ্যক বাঘের বাচ্চার অনাহারে মারা পড়তে হবে। দুই বা তিন জেনারেশন বাঘের ভিতরই সংখ্যাটা আগের জায়গায় ফিরে আসবে।

এই দুইটা তথ্যে যদি আপনার আপত্তি না থাকে, তবে আমি প্রথম অনুসিদ্ধান্তে চলে আসি।

অনুসিদ্ধান্ত-১
একটি নির্দিষ্ট এলাকায় যতগুলো প্রানী বেচে থাকতে পারে তার থেকে অনেক বেশি জীব জন্মায় এবং যেহেতু বসাতুতন্ত্রের অমোঘ নিয়মে জীবের সংখ্যার বড়সড় হেরফের হয় না, সেহেতু বেচে থাকার জন্য বা টিকে থাকার জন্য প্রতিটি জীবের মধ্যে তীব্র সংগ্রাম চলে। ফলে প্রতিটি প্রজন্মের(জেনারেশনের)ভিতর মাত্র একটি ক্ষুদ্র অংশ টিকে থাকে।

ব্যাখ্যা-
একটা গোল্ড ফিসের কয়টা বাচ্চা বেচে থাকে বলে আপনার ধারনা?
টিকে থাকার এই সংগ্রামকেই ডারউইন বলেছেন জীবন সংগ্রাম। প্রতিটা জীব তার নিজের প্রজাতির সাথে বা অন্য প্রজাতির সাথে টিকে থাকার জন্য নিত্যই সংগ্রাম করে চলেছে।

fact ০৩
যৌন জননে জন্ম নেয়া যেকোন দুইটি জীব কখনোই এক নয়। জ়িব জগতে তাই একই জীবের ভিতর হাজার হাজার ভ্যারাইটি দেখা যায়।
ব্যাখ্যা-
বেচারা ডারউইন বা ওয়ালেস জিন কি জিনিস সেটা জানত না। তাই কষ্ট করে ব্যাখ্যা করেছে। এখন আমরা সবাই জানি মিয়োসিস বিভাজনের সময়েই জিনে মিউটেশন ঘটে যায়। সুতরাং কখনোই একই জীবের দুইটা সন্তান বা বংশধর পরিপূর্নভাবে এক হবে না। ব্যাক্টেরিয়া থেকে মানুষ –সব জীবের ক্ষেত্রেই এটা সত্য।
fact-০৪
fact তিনে উল্লেখিত ভ্যারাইটি গুলো অনেকটাই বংশানুসৃত হয়।
ব্যাখ্যা-
এটার ব্যাখ্যা করার আসলে প্রয়োজন নাই। বাপ-মা থেকে যে জিন পাওয়া যায় , বংশধর সেই রকমই হবে।
অনুসিদ্ধান্ত-০২
যেহেতু একই জীবের প্রজাতির অনেকগুলা ভ্যারাইটি তৈরী হয়(fact-০৩-০৪) এবং যেহেতু জীবের সমস্ত বংশধর টিকে থাকতে পারে না( অনুসিদ্ধান্ত-০১ অনুযায়ী) সেহেতু বলা যায় যে, ভিন্ন ভিন্ন ভ্যারাইটিগুলোর ভিতর যেটি যোগ্য শুধুমাত্র সেটিই টিকে থাকবে।

ব্যাখ্যা-
এটিই বিখ্যাত প্রাকৃতিক নির্বাচন তত্ত্ব- “ survival of the fittest”

ধরা যাক, আপনি চিকন আর লম্বা লাউয়ের একটা জাত তৈরী করতে চান। আপনি বাজার থেকে কয়েকজাতের লাউয়ের চারা কিনে নিয়ে আসলেন। আপনার বিশাল বাগানে লাগালেন শখানেক গাছ। ফল হবার পর দেখলেন আপনি যেটা চাচ্ছেন- লম্বা আর চিকন লাউ- সেইটা ধরেছে মাত্র দুইটা বা তিনটা গাছে। আপনি সেই গাছ দুই- তিনটা থেকে- যেই লাউটাকে মনে হল পারফেক্ট- শুধু সেই লাউটার বিচি জমিয়ে রাখলেন। পরের বছর একশ চারাই লাগালেন সেই লাউয়ের জমানো বিচি থেকে। এবারের লাউ ধরল। সব কয়টাই চিকন আর লম্বা। আপনি সেগুলো থেকে যেটা পারফেক্ট বা আপনার ইচ্ছার সাথে সবচে বেশি মিলল শুধু সেই লাউটা রাখলেন।
এভাবেই প্রতি বছর লাউয়ের ভিতর সবচে চিকন আর লম্বা লাউটারই শুধু চাষ করতে লাগলেন। বছর দশেকের ভিতর দেখা যাবে আপনার বাগানের লাউ সম্পূর্ন নতুন জাত। এত চিকন আর লম্বা আর কারোই লাউ নয়।

এই পদ্ধতিকে বলা হয় কৃত্রিম নির্বাচন। আপনি প্রতিটা জেনারেশনে সবচে চিকন আর লম্বা লাউ বেছে নিয়েছেন। আস্তে আস্তে আপনি মোটা বেটে লাউ থেকে কাংখিত চিকন আর লম্বা লাউয়ে চলে গিয়েছেন।

ধরা যাক ঢাকার মশার কথা। এক সময় এখানে যে মশা ছিল তা কয়েলের কারনেই মারা যেত। সহজ হিসাব করি। ধরা যাক, ঢাকায় মাত্র একশ মশা বেচে থাকার মত মানুষ আছে। জেনারেশন০১ এর মশারা অবশ্যই একশর বেশি ডিম পাড়ছে। কিন্তু মূককীট থাকতেই বা আরেকটু বড় হয়ে অনেক মশা মরে গেছে। শেষ পর্যন্ত একশ মশাই জেনারেশন ০২ এ আসতে পেরেছে। জেনারেশন ০১ যে মশা ছিল সেগুলো কয়েলের সামান্য ধুয়াতেই মারা যেত। কিন্তু জেনারশন ০২ এ শুরুতে হয়ত ১২৫ টা মশা ছিল। এর ভিতর ৫ টা প্রাকৃতিক মিউটেশনের কারনেই হয়ত একটু বেশি সহ্য ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে। ১২৫ টা থেকে যখন ১০০ টা টিকে থাকছে তখন দেখা গেল অই পাচটাই টিকে গেছে। বাকি ১২০ টার ৯৫ টা বেচে গেছে। এই পাচটা ডিম পাড়ল। ৯৫ টাও পাড়ল। এইবার ০৫ টা থেকে জেনারেশন ০৩ এ ১৫ টা টিকে গেল আর সাধারন আসল ৮৫ টা। এইভাবে আস্তে আস্তে হয়ত আশি-নব্বই জেনারেশন পর দেখা যাবে, মশাগুলার সবকয়টার সহ্য ক্ষমতা বেড়ে গিয়েছে। এরা অন্য জেলার মশা থেকে আলাদা হয়ে গেছে। লম্বা সময় ধরে পরোক্ষভাবে সহ্যক্ষমতা বেশি এই রকম মশা নির্বাচন করে করে আমরা মশার নতুন একটা ভ্যারাইটি তৈরী করে ফেলতে পারছি। সময় পেলে নতুন একটা প্রজাতি বের হয়ে আসতেও পারে।

পঞ্চাশ বছরে যদি মশার এই হাল হয়, হাজার বছরে কি হতে পারে তার ধারনা করুন। যেভাবে সাধারন মশা থেকে উন্নত(!) মশায় রূপান্তর ঘটল, হাজার বছর ধরে প্রকৃতি একটু একটু করে সরল জীব থেকে জটিল জীবের উদ্ভব ঘটিয়েছে।
মোটামুটিভাবে এইটাই ডারউইনের বিবর্তন তত্ত্ব। ( আমি যতটুকু বুঝছি আর কি। আমি ইঞ্জিনীয়ার মানুষ। জীব বিজ্ঞানে দুর্বল। এখানে কোন অসঙ্গতি থাকলে তার জন্য আমি দায়ী- ডারউইন না। )

সূত্র-
Origin of species http://www.gutenberg.org/etext/2009
প্রজাতির উৎপত্তি- ম. আখতারুজ্জামান ( অতি কুৎসিত অনুবাদ)

এ. আর. ওয়ালেস এর তিনটা অনুসিদ্ধান্তের আদলে লেখা। তিন নম্বরটা জরূরী মনে না হওয়ায় এবং জোস কমে যাওয়ায় লিখলাম না।( আমি বড় অলস মানুষ। )