চাকুরীর ইন্টারভিউ দেবার তরিকা

ধরেন আপনি বন্ধুর বাসায় গিয়েছেন। দোস্ত বাসায় নাই, একটু পর আসবে ।বন্ধুর বাসার বারান্দায় দুইটা কুত্তার বাচ্চা। একটা দেখতে সাদা বেশ সুন্দর, আরেকটা বাদামী, দেখতে খারাপ না। আপনি বারান্দায় গেলেন। বাদামীটা দৌড়ে এলো আপনার কাছে। পায়ের কাছে এসে ঘষাঘষি করতে লাগল। লেজ নাড়িয়ে নাড়িয়ে আপনার সাথে খেলা শুরু করেছে। সাদা কুত্তার বাচ্চাটা কেন জানি গম্ভীর হয়ে বসে আছে। খুব একটা নড়া-চড়া করছে না। আপনার মনে ইচ্ছে হতে লাগল একটা কুত্তার বাচ্চা পালা শুরু করলে খারাপ হত না।
আপনার দোস্ত আসল এই সময়। আড্ডা দিচ্ছেন।কথাবার্তার এক পর্যায়ে সে আপনাকে জানাল একটা কুত্তার বাচ্চা যদি আপনি নিয়ে যান তবে ভালো হয়। সে আর আগ্রহ পাচ্ছে না কুত্তা পালতে।
আপনি কোন বাচ্চাটা নিবেন??? সম্ভাবনা নব্বইয়ের বেশি বাদামী বাচ্চাটা, যেটা আপনাকে দেখে খুশিতে লেজ নাড়তে শুরু করেছে সেইটাই।



আমি একবার একটা গার্মেন্টসে ইন্টারভিউ দিতে গেলাম। সেখানে একটা waste water treatment plant তৈরী হবে। আমার থিসিস ছিল water treatment এর ওপর। তাই খুব আগ্রহ নিয়ে গেলাম ইন্টারভিউ দিতে। গারমেন্টস এর মালিক ইন্টারভিউ নিচ্ছে। ইন্টারভিউ দেবার জন্য বাইরের একটা রুমে যারা বসে আছি তারা সবাই আমার ক্লাসমেট। আড্ডা দিচ্ছি অনেকটা। এমন সময় বোমা ফাটলো। এক দোশ্ত বের হয়ে এসে বলে হারামজাদা ত মাত্র ছয়হাজার টাকা অফার করেছে। সে না করে দিয়ে এসেছে।
এরপরের জন বের হয়ে এসে বলল আরো ভয়াবহ কথা। ছ হাজার শুনে সে যখন বলেছে আরেকটু বেশি দিলে বিবেচনা করতে পারে, তখন গার্মেন্টস মালিক উত্তর দিয়েছে এর বেশি দেয়া সম্ভব না। তবে একজন মেয়ে এসিস্ট্যান্ট দেয়া যেতে পারে। এই কথা বলার পর আবার মুখ টিপে হেসে বলেছে যে বুঝার সে এতেই বুঝবে।
আমি মাথা ঘুরিয়ে অফিসের দিকে তাকালাম। এর আগে খুব একটা মনযোগ দিয়ে তাকাইনি। এবার মেয়েদের দিকে তাকালাম। চারজন খুব সুন্দর মেয়ে আছে অফিসে। তাহলে ব্যাপার এই! শালা লুইচ্চার চূড়ান্ত। সাথে সাথে অফিস থেকে বের হয়ে চলে যাওয়া উচিত ছিল। গেলাম না। যখন অফিসে এসেছি তখন একটু কথা বলেই যাই। তখন ত আর জানি না,এই লোকটার সাথে কথা না বললে আমার ইন্টারভিউ দেবার তরিকাটাই জানা হত না।

একসময় গার্মেন্টস মালিকের রূমে আমার ডাক আসে। আমি খুব বিরক্তি নিয়ে ঢুকি। আমাকেও ছয় হাজার টাকা আর assistant এর কথা বলা হল। আমি বিরক্তি চেপে কোনরকমে বলি আগামী মাসে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। তখন যদি আমি চাকুরি না পেয়ে থাকি তবে এটা করব।
আরো অনেক কথাবার্তা হলো। শেষের দিকে লোকটা আমার জীবনের শোনা সবচে মূল্যবান কথাগুলার একটা কথা বলল, আমার হাসি খুশি মুখ দেখতে ভালো লাগে।


এই ইন্টারভিউ দেবার পর আর যত ইন্টারভিউ দিয়েছি আমার চাকুরি হয়েছে।আমার বন্ধুদের কয়েকজন যখন জব না পেয়ে হতাশ, তখন আমি শুধু ভালো লাগে না বলে চাকুরি পাল্টাতে পারি।

কারন আর কিছুই না। ইন্টারভিউ বোর্ডে কোন প্রশ্ন না পারলেও আমি হাসি। সিরিয়াস মুখে ইন্টারভিউ দেই না। আমি প্রথমে বলা সেই বাদামী কুত্তাটার মত আচরন করার চেষ্টা করি। আমার চেয়ে যোগ্যরাও জব পায় না, মামু চাচা না থাকার পরও আমি পাই। কারন যারা ইন্টারভিউ নিচ্ছেন তারা হাসিখুশি মুখ যোগ্যতার চেয়েও বেশি পছন্দ করেন।

No comments: