নারী নাকি বাঘ?

একটি বিশেষ কারনে আমার গল্প শুরু হল রোমান সময়ে। সুসভ্য আর পরাক্রমশালী রোমের পাশের ছোট একটা আধা-বর্বর রাজ্য নিয়ে আমার গল্প।
আধা বর্বর রাজ্যের রাজা যে আধা সভ্য সেটা বোধহয় না বললেও চলে। প্রতিবেশী রোমান সাম্রাজ্য থেকে তিনি কিছু জ্ঞান নিয়েছেন, হয়ত কিছুটা সভ্য হয়েছেন। কিন্তু মানুষের স্বভাব যায় না কিছুতেই। আর রাজার স্বভাব শুধরাবে এমন মানুষ কই?
আমাদের গল্পের তিনি নায়ক নাকি ভিলেন সেটা সময় ঠিক করবে।
রোমান সম্রাজ্যের অনুকরনে একটা সংবিধান তৈরী করা হয়েছে, রাজা যেটাকে মাঝে মধ্যে ডিঙ্গিয়ে যেতে ভালোবাসেন। কিন্তু আইন কানুন রাজ্যে যে বলবত আছে সেটা অস্বীকার করা যায় না। নিয়মের ভিতরে থেকে বিচার হয়, শাস্তি হয়। রাজ্যে মোটামুটি শান্তিও আছে।
যখন কোন নিয়ম থাকবে তখন তার একটা সীমাবদ্ধতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। মাঝে মাঝেই এমন কিছু পরিস্থিতির উদ্ভব হত যা প্রচলিত আইনকানুন দ্বারা বিহিত করা যায় না। তখন রাজার মুখে যে হাসি ফুটে উঠত সে হাসি রাজকুমারী অন্য কখনো দেখত না। অসমতলকে সমতল আর বাকাকে সোজা করতে রাজা খুব পছন্দ করতেন।
এইখানে ছোট একটা অপ্রাসংগিক কথা বলতে হবে। রাজকুমারীর কথা এলো। কোন কোন পাঠক হয়ত একতু নড়ে-চড়ে বসছেন। সেই কি শিরোনামের “নারী?” হে হে হে... মেয়ে কি সুন্দরী নাকি?
সুন্দরী ত বটেই।
যা বলছিলাম, কেউ যদি এমন কিছু করে বসত যে কোন ভাবেই বিচার করা যাচ্ছে না সে দোষী না নির্দোষ, তার কর্মকান্ডে এমন গোলকধাধা তৈরী হয়েছে যে বিচারক কিছুই বলতে পারছেন না। কেসটা চলে আসত রাজার কাছে। রাজা তার মস্তিস্ক প্রসূত একটি সহজ, বিনোদনধর্মী এবং অতিমাত্রায় নিরপেক্ষ পদ্ধতিতে বিচার করতেন।
রাজার এই ধরনের প্যাচাল কেইস সলভ করার জন্য বিরাট একটা স্টেডিয়াম বানিয়েছেন। বিচারের দিন পুরা স্টেডিয়াম খুলে দেয়া হয়। দর্শকরা এসে নিজের জায়গা নিলে অভিযুক্তকে নিয়ে আসা হয় মাঠের মাঝখানে। স্টেডিয়ামের মাঝখানে দুইটা দরজা। একটা দরজার পিছনে ক্ষুধার্ত বাঘ, আরেকটা দরজার পিছনে রাজার মনোনীত এক নারী। কোন দরজার পিছে বাঘ থাকবে আর কোনটার পিছে নারী সেটা রাজার একজন সেনাপতি ঠিক করেন। পুরা রাজ্যে শুধু সেই জানে মৃত্য আর জীবন কোন দরজার পিছে কি। অভিযুক্ত লোক এগিয়ে যায়। দরজা খুলে। যদি নারী বের হয়ে আসে, তাহলে মাঠের মধ্যেই তাদের বিয়ে পড়ানো হয়। রাজা নেমে এসে আশীর্বাদ করেন। উপহার দেন। সম্মানের সাথে সে বিদায় নেয়। আর যদি বাঘ বের হয়ে আসে তবে কি হয় সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
রাজাকে কেউ কেউ বলে এটা অন্যায় সেটা বন্ধ হোক। কিন্তু রাজাও যুক্তি দেন। অভিযুক্তের ফয়সালা কি সে নিজেই করছে না? আর বাঘ বের হয়ে আসবে নাকি নারী সেটা নিয়ে সারা রাজ্যের কৌতূহল। জনগন যখন মাঠে আসে তখন তারা জানে না বিয়ে দেখতে যাচ্ছে নাকি মৃত্যু। অনিশ্চয়তা একটা বিরাট বিনোদন। আর বিনোদনের প্রয়জনীয়তা কে অস্বীকার করবে?
গল্পের এই পর্যায়ে যুবকের কথা বলি। সাধারন ঘরে জন্ম তার। সে দেখতেও তেমন আহামরি কিছু নয়। কিন্তু রাজকুমারী ভালোবাসে তাকে। কিভাবে যুবকের সাথে রাজকুমারীর দেখা আর এত সম্ভ্রান্ত যুবক থাকতে কেন সে সাধারন একটা যুবককে ভালোবাসে সেই কাহিনী অন্যত্র বলব। ব্লগ বড় হয়ে যাচ্ছে।
রাজার কানে গেল কথাটা। যুবকের বিচার হবে। বিচারের সময় দেখা গেল এমন কোন আইন নাই যে রাজকুমারী এক সাধারন যুবককে ভালোবাস্তে পারবে না। কিন্তু রাজার ইচ্ছে তার শাস্তি হোক। এতবড় সাহস ছোটলোক হয়ে রাজার মেয়ের দিকে হাত বাড়ায়??? রাজার তার বিচার করার সিদ্ধান্ত নিলেন স্টেডিয়ামে।
বনে সৈন্য পাঠানো হল। বাঘ খুজে নিয়ে আস।
রাজকন্যা এই পাগলের মত উপায় খুজে বেড়াচ্ছে। কোন দরজার পিছে কে থাকবে সেটা জানা দরকার। আর রাজা যুবকটির জন্য ঠিক করেছেন রাজকুমারীর বান্ধবীকে। যদি যুবকটি সঠিক দরজা খুলতে পারে তবে সে পাবে তাকে বউ হিসাবে।
রাজকুমারীর অর্থ আছে, তার সৌন্দর্যও অত্যধিক। তার ইচ্ছের জোর প্রবল। সে তার সমস্ত ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে খুজে বের করল কোন দরজার পিছে বাঘটা রাখা হবে।
রাজকুমারী সারা রাত ধরে ভাবছে। যদি দরজা দিয়ে বাঘ বের হয়ে আসে তবে তার প্রেমিক চোখের সামনে মারা যাবে। আর যদি বের হয়ে আসে তার সহচরী তবে তাদের দুইজনের বিয়ে হয়ে যাবে। যাই ঘটুক তার প্রেমিককে যে সে হারাচ্ছে সেটা নিশ্চিত। যখন সে চিন্তা করে যে তার প্রেমিককে বাঘে খেয়ে ফেলছে তখন তার চোখের জলের সীমা থাকে না। আবার যখন মনে হয় তার সহচরীকে যুবকটি বেচে থাকার আনন্দে জড়িয়ে ধরছে, তাদের বিয়ে হচ্ছে। তখন তার রাগের সীমা থাকে না।
বিচারের দিন যুবককে আনা হল। সে মাঠে প্রবেশ করে কুর্নিশ করল রাজাকে। রাজকুমারীর দিকে তাকাতেই রাজকুমারী চোখের ইশারায় বা দিকের দরজা দেখিয়ে দিল।
যুবকটি আর কথা না বলে দৃঢ় পদক্ষেপে এগিয়ে গিয়ে খুলে ফেলল বাদিকের দরজা। এখন প্রশ্ন হল দরজা দিয়ে কি বের হয়েছিল? বাঘ নাকি নারী?

গল্প এখানে শেষ।


(একটা কথা বলা হয় নাই। এটা অনুবাদ। মূল গল্পের লেখক Frank Stockton।)

No comments: